আমাদের শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে প্রোটিন এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এটি শুধু পেশির গঠনেই সাহায্য করে না, শরীরের টিস্যু মেরামত, হরমোন উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করে। সাধারণত আমরা ডিমকেই প্রোটিনের প্রধান উৎস বলে ধরে নিই, কারণ একটি মাঝারি আকৃতির ডিমে থাকে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন। কিন্তু অনেকেই জানেন না, নিরামিষ খাবারের মধ্যেও এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যেগুলিতে ডিমের তুলনায় বেশি প্রোটিন থাকে। শুধু বেশি নয়, এই প্রোটিনগুলি অধিক হজমযোগ্য, দেহবান্ধব ও পরিবেশবান্ধবও বটে।
বর্ষাকাল মানেই সর্দি, কাশি, জ্বরের প্রকোপ
যেমন, সয়াবিন এমন একটি খাদ্য, যা প্রোটিনের দিক থেকে অনেক প্রাণিজ উৎসকেও হার মানায়। এক কাপ সিদ্ধ সয়াবিনে পাওয়া যায় প্রায় ২৮ থেকে ৩০ গ্রাম প্রোটিন, যা একটি ডিমের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। তেমনি ছোলা ও মুসুর ডালেও থাকে বিপুল পরিমাণ প্রোটিন। এক কাপ সিদ্ধ ছোলাতে থাকে প্রায় ১৫ গ্রাম প্রোটিন, আবার মুসুর ডালেও থাকে প্রায় ১৮ গ্রাম। যারা সকালের জলখাবারে ডিম খেয়ে থাকেন, তারা চাইলে এই ধরনের ডাল দিয়ে বানানো চিলা বা উপমা ট্রাই করতে পারেন, যা একইসাথে স্বাদ ও স্বাস্থ্য—উভয়দিক বজায় রাখবে। এছাড়া কুইনোয়া, একটি ছানা জাতীয় শস্য, যা গ্লুটেন-মুক্ত ও প্রোটিন সমৃদ্ধ। এক কাপ রান্না করা কুইনোয়াতে থাকে প্রায় ৮-৯ গ্রাম প্রোটিন, এবং এর সঙ্গে থাকে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিডও। বাদাম যেমন পিনাট, আমন্ড বা আখরোট—এগুলোতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। ২ টেবিল চামচ পিনাট বাটারে প্রায় ৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। চিয়া সিডসও একটি চমৎকার নিরামিষ প্রোটিন উৎস। মাত্র ২ টেবিল চামচ চিয়া সিডসে থাকে প্রায় ৪-৫ গ্রাম প্রোটিন, যা দুধে মিশিয়ে সহজেই গ্রহণ করা যায়।
এসব খাবারই শুধু প্রোটিনেই ভরপুর নয়, বরং ফাইবার, আয়রন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও পূর্ণ। এগুলো হজমে সাহায্য করে দীর্ঘক্ষণ পেট ভর্তি রাখে যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য হয়। ডিম ও মাংসের জায়গায় এদের খাদ্যতালিকায় যদি সংযুক্ত করা হয় তাহলে শরীর যেমন ভরপুর পুষ্টি পায় তেমনি শাকাহারী জীবনযাপনও সহজ হয়। বর্তমান সময়ে যখন মানুষ স্বাস্থ্যসচেতনতার দিকে ঝুঁকছে এবং প্ল্যান্ট-বেসড খাদ্যাভ্যাস জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তখন এই নিরামিষ প্রোটিন সোড়স ভবিষ্যতের 'সুপারফুড' হয়ে উঠছে। ডিম খান না বা নিরামিষভোজীদের জন্য এই খাদ্য গুণগুলি নিঃসন্দেহে একটি কার্যকর ও পুষ্টিকর বিকল্প। সঠিক জ্ঞান, পরিকল্পিত খাদ্য তালিকা ও রান্নার পদ্ধতিতে এই নিরামিষ প্রোটিন উপাদানগুলোই হয়ে উঠতে পারে সুস্থ ও টেকসই জীবনের চাবিকাঠি।