ফের দিল্লিতে বিস্ফোরণ! দিল্লি সহ চার জায়গায় বিস্ফোরণের ছক ছিল
আজ, বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লির মহিপালপুরে একটা জোরাল বিস্ফোরণ হয়। র্যাডিসন হোটেলের কাছে এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে খবর। সকাল ৯টা ১৮ মিনিট নাগাদ দমকলের কাছে খবর যায়। পুলিশও ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তিন দিন আগেই দিল্লির লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়, যাতে প্রাণ হারান কমপক্ষে ১২ জন।
পুলওয়ামার বাসিন্দা ডঃ উমর নবি দীর্ঘদিন ধরেই আগ্রাসী মৌলবাদী চিন্তাভাবনায় প্রভাবিত হয়ে উঠেছিল। এমনকী, তার মধ্যে ভারতবিরোধী ভাবনাচিন্তাও রীতিমতো প্রকাশ পেতে শুরু করেছিল। তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই উমরের বাড়িতে পৌঁছেছেন, সেখানে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে আরও পরিষ্কার হয়।
তদন্তকারীরা উমরের বাড়ি থেকে প্রাপ্ত নথি ঘেঁটে জানতে পেরেছেন, উমর দিনের পর দিন একটি অ্যাপের মধ্যে "উকসা" নামক একটি হ্যান্ডলারের সঙ্গে যোগাযোগ করত। যারা ওই অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করত, তারা তুরস্কের আঙ্কারায় থাকে। এই অ্যাপও আঙ্কারার তৈরি বলেই তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।
দিল্লিতে আত্মঘাতী জঙ্গি উমর নবিই। গাড়িতে উদ্ধার দেহাংশর সঙ্গে DNA ম্যাচ। উমরের মা-ভাইয়ের সঙ্গে DNA-র ১০০% মিল। দাঁত-হাড়-কাপড়ের টুকরোর সঙ্গে DNA ম্যাচ। এখনও পর্যন্ত ৯ জনের দেহ শনাক্ত। এদিকে, পুলওয়ামার কোয়েল গ্রামের বাসিন্দা দিল্লি বিস্ফোরণের আত্মঘাতী জঙ্গি উমর নবী। মঙ্গলবার, তার মা শামীমা বেগমকে তার দুই ছেলের সঙ্গে পুলওয়ামায় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আই২০ গাড়ি বিক্রি এবং ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত তিন ব্যক্তিকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। উমরের শ্যালিকা মুজামিল বলেন, পরিবারের কাছে এই তথ্য অবিশ্বাস্য। উমর শান্ত, অন্তর্মুখী, সবসময় পড়াশোনা এবং কাজের উপর মনোযোগ থাকত। সে যে সন্ত্রাসবাসদী কাজে এভাবে জুড়ে যাবে, ভাবতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, উমর শেষবার প্রায় দু’মাস আগে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন।
এদিকে দিল্লি বিস্ফোরণে উমরের নাম জড়ানোয় বিপর্যস্ত তাঁর পরিবার। পুলওয়ামার কইল গ্রামের বাসিন্দা উমরের বউদি বলছেন, “গত শুক্রবারই ওর সঙ্গে কথা হল। তখন বলল সামনে পরীক্ষা আছে তাই লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করছে। একেবারে বইয়ের পোকা ছিল। বাড়িতে ফিরলেও সকলকে পড়াশোনা করতে বলত। সেই ছেলের এমন কাণ্ড শুনে আমরা স্তম্ভিত।” তিনি জানান, কঠিন পরিশ্রম করে পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচানোর চেষ্টা করছিলেন উমরের মা। হাল ফেরাতে আশার আলো ছিল উমর। কিন্তু সেই বই পোকা ছেলেই নাশকতার সঙ্গে জড়িয়েছে, হতাশ গোটা পরিবার।
বিস্ফোরণের আগে ২০ লক্ষ টাকা জোগাড়! টাকা জোগাড় উমর-মুজাম্মি-আদিল-শাহিনের! পরে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় উমরকে! ৩ লক্ষ টাকার NPK সার কিনেছিল উমর। এনপিকে সার দিয়ে IED তৈরির ছক ছিল। গুরুগ্রাম-নুহ থেকে NPK সার কেনে উমর। উমর-মুজাম্মিলের মধ্যে টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়। ২-৪ জন সদস্য নিয়ে সিগনাল অ্যাপে গ্রুপ তৈরি করে উমর।
তদন্তকারীদের হাতে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি। প্রাপ্ত নথি অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চ মাসে উমররা বেশ কয়েকজন মিলে আঙ্কারা গিয়েছিল। তদন্তকারীরা নিশ্চিত, উমর এবং বিস্ফোরণকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া বেশ কয়েকজন সেই দলে ছিল। আঙ্করায় উমর সহ বাকিদের ভারত বিরোধী কার্যকলাপে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করে তোলা হয় এবং ব্রেন ওয়াশ করা হয় বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা।
২০২২ সালের মার্চ থেকে জুনের মধ্যে আঙ্কারায় কারা কারা ভারত থেকে গিয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য পেতেই তুরস্ক দূতাবাসে যোগাযোগ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। একইসঙ্গে, তুরস্ক থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ বিভিন্ন হাত ঘুরে উমর এবং তার সঙ্গীদের কাছে এসে পৌঁছত। তারা যে জইশের “মিডল ম্যান” হিসেবে কাজ করত, তা নিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা।
বুধবার রাতে ফরিদাবাদের খান্ডেলওয়ালি গ্রামের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় লাল রঙের ফোর্ড ইকোস্পোর্টস গাড়ি। এই সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িটিরও মালিক ছিলেন ডঃ উমর উন নবি ওরফে উমর মহম্মদ।
বিস্ফোরণের পর যখন উমর নবির নাম-ঠিকানা আসে পুলিশের হাতে, তখনই তথ্য তালাশ করে জানা যায় যে উমর নবি দুটি গাড়ি কিনেছিলেন। একটি গাড়িতে সোমবার বিস্ফোরণ হয়। তদন্তকারীরা উমরের দ্বিতীয় গাড়ি, এই লাল রঙের ফোর্ড ইকো স্পোর্টস গাড়িটিও খুঁজছিল, কারণ আশঙ্কা ছিল, এই গাড়িতেও বিস্ফোরক রাখতে পারে জঙ্গিরা। শুরু হয় চিরুণি তল্লাশি। শেষে বুধবার ফরিদাবাদের খান্ডেলওয়ালি গ্রামের বাইরে থেকে এই লাল গাড়িটি উদ্ধার করা হয়।
যে জায়গা থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে, তার থেকে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার। এই আল ফালাহ ইউনিভার্সিটিতেই চিকিৎসা করতেন ডঃ মুজাম্মিল ও ডঃ শাহিন। মুজাম্মিলের ভাড়া নেওয়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কেজি বিস্ফোরক। অন্যদিকে ডঃ শাহিন জইশ-ই-মহম্মদের মহিলা উইংয়ের প্রধান। তিনিই এই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাথা ছিলেন।
সূত্রের খবর, যে বাড়ির কাছ লাল গাড়িটি পাওয়া গিয়েছে, তা উমরের এক বন্ধুর। তাঁর গতিবিধির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে, সাদা আই-২০ গাড়িটিও সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি ছিল। ওএলএক্সের মাধ্যমে রয়্যাল কার জোন থেকে ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই গাড়িটি কেনা হয়েছিল।
তদন্তকারীদের অনুমান, বড় একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল জঙ্গিরা। তাদের পালানোর পরিকল্পনাও ছিল। এই হামলা চালানো হত আগামী ২৬ জানুয়ারি। দিল্লির লালকেল্লা সহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় সিরিয়াল ব্লাস্ট করানোর পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। তবে আগেই বিস্ফোরক ধরা পড়তেই তড়িঘড়ি সোমবার বিস্ফোরণ ঘটায় উমর নবি।
উল্লেখ্য, ফরিদাবাদ মডিউলের সূত্র প্রথম মেলে গত ১৯ অক্টোবর, যখন শ্রীনগরে জইশ-ই-মহম্মদের সমর্থনে পোস্টার লাগানোর অভিযোগে চিকিৎসক আদিলকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করলে উঠে আসে শাহিন, মুজাম্মিল ও উমরের নাম। এরপর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান।
তদন্তে আরও জানা যাচ্ছে, দেশের বড় বড় শহরে হামলার পরিকল্পনা ছিল। সেইজন্য কয়েক মাস ধরেই বিস্ফোরক মজুত করা হচ্ছিল। তবে হয়তো তাড়াহুড়ো বা ভুলবশত আগেই বিস্ফোরণ ঘটে যায়, যার ফলে আরও বড় বিপর্যয় এড়ানো গেছে।
সূত্রের খবর, ৮জনের একটি দল ২জন করে ৪টি দলে ভাগ হয়ে চার জায়গায় দিল্লি সহ চার জায়গায় বিস্ফোরণের ছক ছিল। অন্য সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩ বছর পূর্তি। ওই সময়েই নাশকতার ছক কষেছিল উমর নবি। দেশের ৬ জায়গায় বিস্ফোরণের ছক ছিল। ২৬ শে জানুয়ারির দিনও টার্গেট ছিল।