দক্ষিণবঙ্গের আকাশে ফের গভীর সঙ্কেত। মৌসুমী অক্ষরেখা ও নিম্নচাপের প্রভাবে রাজ্যের একাধিক জেলায় জারি হয়েছে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। ইতিমধ্যেই গত দু’দিন ধরে দামোদর উপত্যকা অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত। এই পরিস্থিতিতে জল ছাড়তে শুরু করেছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)। মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কিউসেক জল। যার জেরে নতুন করে আশঙ্কায় পড়েছেন নিম্ন দামোদর উপত্যকার মানুষজন।
ডিভিসি সূত্রে জানা গেছে, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে লাগাতার বৃষ্টির জেরে তেনুঘাট ও তিলিয়া বাঁধে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই জল এসে জমা হয়েছে মাইথন ও পাঞ্চেতে। ফলে বাধ্য হয়েই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিভিসি। মঙ্গলবার রাতে বরাকর উপত্যকায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আজ বুধবারও পূর্ব বর্ধমান সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত চলছে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ ও আগামিকাল ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। জল ছাড়ার খবরে ফের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া ও ঘাটাল সহ একাধিক জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে। প্রতি বছর বর্ষার সময় ডিভিসির জল ছাড়ার ফলে নিম্ন দামোদর উপত্যকার বিস্তীর্ণ অংশে বন্যা দেখা দেয়। বহু ক্ষেত্রেই এই জল ছাড়ার বিষয়ে রাজ্যকে আগাম জানানো হয় না—এমনটাই অভিযোগ রাজ্য সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গত বছরও বন্যার ফলে এই অঞ্চলের বহু এলাকা প্লাবিত হয়। চাষের জমি, ঘরবাড়ি, মাছের পুকুর তলিয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেন ত্রাণ শিবিরে। প্রশাসনের তরফে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ক্ষতির পরিমাণ ছিল বিপুল। এবছরও সেই অভিজ্ঞতা পুনরায় ঘটবে কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
স্ক্রুটিনি ও রিভিউয়ের ফল প্রকাশে বড়সড় রদবদল, মেধা তালিকায় নতুন চমক
ডিভিসির জলাধারগুলি নিয়মিত সংস্কার না হওয়া, পলি তোলার অভাব—এসব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা সংস্থাটি যদি জলাধার সংস্কারে গুরুত্ব দিত, তাহলে এত ঘন ঘন জল ছাড়তে হতো না। একাধিক বৈঠকে এই বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। যদিও ডিভিসির দাবি, এখন থেকে জল ছাড়ার আগে রাজ্যকে জানানো হবে। আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা এবং ডিভিসির জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত—এই দুইয়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা এখন বন্যার আশঙ্কায় দিন গুনছে। পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রেখেছে রাজ্য প্রশাসন। তবে প্রকৃত দুর্যোগ এড়াতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আরও সমন্বয় প্রয়োজন—এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।