Flash News
Monday, September 22, 2025

দ্য হিটম্যান ২.০

banner

journalist Name : Avijit Das

#Pravati Sangbad Digital Desk:

তার কামব্যাক আর ট্যালেন্ট নিয়ে লিখতে গেলে অজস্র বইকে রিপ্রিন্টে পাঠাতে হবে। তিনি এমন একজন প্লেয়ার যিনি ধীরে ধীরে নিজেকে গড়ে তুলেছেন বর্তমান হিটম্যান হিসেবে। তার চার মারা, ছয় মারার দক্ষতা নিয়ে কত কলম কতভাবে কাটাছেঁড়া প্রতিদিন করে চলেছে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। হ্যাঁ তিনিই হিটম্যান, মাঠের মধ্যে ৩টি ডবল সেঞ্চুরি হাঁকানো কিংবা মাঠের বাইরের নৈশ জীবন থেকে বেরিয়ে আসা সব কিছুতেই প্রমান করে দিয়েছেন তিনি সত্যিই একজন সুপারহিরো 'হিটম্যান'। তিনি রোহিত শর্মা, ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান অধিনায়ক।
২০০৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে ভারতের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল রোহিত শর্মার। তখন তিনি ওপেনার ছিলেন না, একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবেই দলে তার সুযোগ হতো; পরে মহেন্দ্র সিং ধোনির পরামর্শে ২০১৩ সালে ওপেনিং করেন। ওপেনার হিসেবে ব্যাট করার পর থেকে অন্য এক রোহিত শর্মাকে দেখে ক্রিকেট বিশ্ব। তার বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা এবং ধারাবাহিকতা তাকে অন্যান্য ওপেনারদের থেকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
তিনি যখন ওপেনিং শুরু করেন ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু হয়েছে ধ্রুপদী বিরাট যুগ। ৩নং এ নেমে বিরাট কোহলি তখন একের পর এক রেকর্ডের পরিসংখ্যানে ভরিয়ে চলছেন নিজেকে, সমগ্র বিশ্ব তখন তাকে ক্রিকেট ঈশ্বর সচিন টেন্ডুলকারের সাথে তুলনা করা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু যেমন সাহিত্যাকাশে রবীন্দ্র গগনেও মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নজরুল, ঠিক তেমনই ক্রিকেটে বিরাট কোহলি থাকলেও বিশ্ব কুর্নিশ জানিয়েছে তার খেলার দক্ষতা, শর্ট নির্বাচন এবং থিতু হয়ে গেলে বিপক্ষ টিমের বোলিংকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়ার ক্ষমতাকে। আজও টিম ইন্ডিয়ায় বিরাট-রোহিত পার্টনারশিপ যদি ৫০ পেরোয়, তাহলে কাঁপুনি চলে আসে বিপক্ষ টিমের।

তবে পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলে রঙিন পোশাকের তুলনায় সাদা পোশাকের ক্রিকেটে কিছুটা নিষ্প্রভ ছিলেন রোহিত। অথচ সাদা পোশাকের ক্রিক্রটে তার শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। রোহিতের জন্য রানপ্রসবা ইডেন গার্ডেনসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক ইনিংসেই খেলেছিলেন ১৭৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন পরের টেস্টেও। কিন্তু এরপরই যেন পা হড়কানো শুরু। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের রেকর্ডের বরপুত্র রোহিত ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকেন ভারতের টেস্ট দল থেকে। কিছু সময় পরপর দলে জায়গা পেলেও ফর্মহীনতার কারণে দলে স্থায়ী হতে পারছিলেন না। অবশেষে ২০১৮ সালে পুনরায় টেস্ট দলে সুযোগ পান রোহিত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন ১৭৬ এবং ২১২ রানের অনবদ্য ইনিংস। কিন্তু এরপরই আঘাত হানে ইনজুরির। ফলশ্রুতিতে ছিটকে পড়েন দল থেকে। আবারও কামব্যাক করেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
আসলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রোহিতের ব্যাপকতা থাকলেও তাকে ভুগিয়েছে ধ্রুপদী টেস্ট ক্রিকেট।  সমালোচকরা বারবার বিধ্বস্ত করেছেন তাকে। তবে বলা যায় এক্ষেত্রে কেবল যে রোহিতে একার দোষ সেটাও না, কারণ রোহিত নিজের উন্নতি করার জন্য পর্যাপ্ত টেস্ট ম্যাচও খেলতে পারেনি কখনো।
তবে এখন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শুরুর দিকের তুলনায় ব্যাটিং স্টান্টে ক্ষুদ্র পরিবর্তন এসেছে রোহিতের ব্যাটিংয়ে। সামনের পা অনেকটাই বাড়িয়ে খেলছেন এবং হাত ও শরীরের মধ্যকার দূরত্বও কমিয়ে এনেছেন আগের তুলনায়। যদিও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তবুও তার ব্যাটিংয়ে উন্নতির ছাপ স্পষ্ট।
কেবল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল নয়, এই বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইতে সেঞ্চুরি এবং আহমেদাবাদে তাঁর ফিফটি জানান দেয় তার সামর্থ্যের কথা। বিশেষ করে চেন্নাইয়ের পিচ ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য মৃত্যুকূপ। প্রথম দিন থেকেই বল ঘুরেছে সাপের মতো, বিশাল সব টার্ন পেয়েছেন স্পিনাররা। সেখানে শুরুতেই ব্যাট করা রোহিতের ব্যাটিংয়ের ধরণ ছিল চমৎকার, সেদিন অসাধারণ ব্যাট করেছিলেন তিনি।
একবার তাঁরই সাবেক সতীর্থ যুবরাজ সিং রোহিতকে এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘আমি খেয়াল করি, তুমি সিনিয়রদের সম্মান করো, যা বলে শোনো। মোটা দাগে এটাই তোমার পরিচয়। এটা ভাল, আবার খারাপ। অনেকে যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ পায়। যার যা ইচ্ছা এসে বলে দিয়ে যায়।’

তাছাড়া একজন খেলোয়াড় একজন অধিনায়কের কাছ থেকে কি প্রত্যাশা করে এমন এক প্রশ্নের জবাব হিসেবে ধাওয়াল বলেন, ‘অধিনায়ক তাঁর সাথে কথা বলবে। দল সম্পর্কে, ওই নির্দিষ্ট খেলোয়াড় সম্পর্কে তাঁর কি অভিমত তা জানাবে। একজন খেলোয়াড় কিভাবে আরো ভাল করতে পারে সেই টোটকা দেবে, এইতো।’ নিজের এই বক্তব্যের সাথে ধাওয়াল আরো জুড়ে দেন, ‘এসব কিছুই রোহিত শর্মা করেন।
সবমিলিয়ে বলা চলে কম্পলিট এক অধিনায়ক প্যাকেজ রোহিত শর্মা। রইলো বাকি তাঁর ধৈর্য্য কিংবা নিজের টেম্পারমেন্ট ধরে রাখা। সেদিক থেকে ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সাথে তূলনা করা যায়। সাধরণত অধিনায়কদের প্রবণতা থাকে চিরায়ত নিয়মের বাইরে কোন কিছু চেষ্টা না করা। কিংবা ম্যাচের মোড় ঘুরাতে একজন বোলার কিংবা ব্যাটারের ব্যক্তিগত প্রতিভাই যথেষ্ট বলে মনে করেন। কিন্তু রোহিত এখানটায় ভিন্ন। তিনি ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে সিধান্ত নিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তাছাড়া নিজের সহজাত প্রবৃত্তির উপর বেশ আস্থা রাখেন রোহিত। এখন শুধু অপেক্ষা ভারতকে সাফল্যের সেই এভারেস্ট চূড়ায় নিয়ে যাওয়ার।

Tags:

#Source: online/Digital/Social Media News # Representative Image

ব্যক্তিত্ব খেলা ক্রিকেট
Related News