#Pravati Sangbad Digital Desk:
ডিসি কমিকসের ব্যাটম্যান কে চেনা আছে নিশ্চই সকলের ? বব কেন সৃষ্ট এই চরিত্র বারবার আমাদের মনে জায়গা কেড়ে নেয় তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি , জেদ, সাহসিকতা এবং হার না মানার এক আকাশছোঁয়া অভিব্যক্তির সংযোজন। ফুরিয়ে গেছেন , গতি নেই , কারুকার্যের অভাব এসব যেন সমালোচক মহলে তার কথা উঠলেই গদ্য রচনার মতো বিভাগ সংযোজন করে । এ হেন সেই মানুষটি ফুটবল ইতিহাসে সর্বাধিক গোলদাতার রেকর্ড করে আরো একবার প্রমাণ করে দিলেন তার নিজেরই করা এক বিখ্যাত উক্তি ,"ইওর লাভ মেক্স মি স্ট্রং, " ইওর হেটস মেক মি আনস্টপেবেল", অর্থাৎ কঠোর পরিশ্রম ও জেতার অনবদ্য ক্ষুদা যদি জগৎ হয়ে থাকে তবে সে জগতের নাম হবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ।
রোনাল্ডোকে ব্যাটম্যান একারণেই বলছি কারণ তিনি ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা তুলনামূলক কম শক্তিশালী হয়েও গোটা বিশ্বের সমস্ত প্রতিভার সঙ্গে এই বয়সেও সমানতালে লড়াই করে চলেছেন, যে লড়াইয়ে তিনি কোনোভাবেই হারতে রাজি নন।
অন্তত ১২ মিনিটে চোখ ধাঁধানো গোলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে এগিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে প্রথমার্ধেই ৩৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরানো টোটেনহ্যামের হ্যারিকেনের ভ্রূকটি উপেক্ষা কিংবা এর তিন মিনিটের মাথায় ফের ঝলসে ওঠা জর্ডান স্যাঞ্চোর থেকে পাওয়া বল ক্ষিপ্রতার সঙ্গে জালে জড়ান পর্তুগিজ নক্ষত্র। হ্যারি ম্যাগুয়েরের আত্মঘাতী গোলে ৭২ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনে টোটেনহ্যাম। ৮১ মিনিটে ফের এক বার ম্যান ইউকে এগিয়ে দেন রোনাল্ডো। অ্যালেক্স টেলাসের পাস থেকে স্পার্স-এর কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেওয়া এসমস্ত কিছুই তাকে সেই ব্যাটম্যান নামক এক বাস্তবের যোদ্ধার কথা মনে করাচ্ছে , যিনি কখনো লড়তে ভুলে যাননি ।
ফিফার এক হিসেব অনুযায়ী অস্ট্রিয়ান-চেক বংশোদ্ভূত বাইকান ১৯৩১ থেকে ১৯৫৫ সাল, এই ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে ৮০৫ গোল করেছেন। রোনালদো এই রেকর্ড ছাড়িযে আজ পেয়েছেন ক্যারিয়ারের ৮০৭তম গোল। রোনালদো তাঁর গোলগুলো করেছেন স্পোর্তিং, ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস ও পর্তুগালের হয়ে।
তবে বাইকানের ক্ষেত্রে চেক প্রজাতন্ত্রের ফুটবল ফেডারেশনের ৮২১ গোল করার দাবিটাও তো কেউ উড়িয়ে দেননি এখনো! তাহলে রোনালদোর রেকর্ড কি সত্যিই হলো, নাকি হলো না! এই প্রশ্নের সমাধান কে দেবেন? ওই যে লেখার শুরুতেই বলা হলো, প্রশ্নটি সহজ, কিন্তু উত্তরটা বেশ জটিল! তবে সেই জটিলতা আর বেশিদিন থাকবে বলে মনে হয় না। গত বছরের জানুয়ারিতে যখন এ হিসাব নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, রোনালদোর গোল ছিল ৭৬০টি। এখন তাঁর গোলসংখ্যা ৮০৭। চেক প্রজাতন্ত্রের ফুটবল কর্তৃপক্ষের হিসাবকেই যদি সবাই ঠিক ধরে নেন, তাহলেও সেটি ছুঁয়ে ফেলতে রোনালদোর আর মাত্র ১৪ গোল দরকার। এই ৩৭ বছর বয়সেও তিনি যেভাবে গোল করে চলেছেন, ১৪ বা ১৫টি গোল করতে আর কদিনই বা লাগবে তাঁর! আজ ইউনাইটেডের ফরাসি মিডফিল্ডার পল পগবার কথাতেই যা স্পষ্ট। বিশ্বকাপজয়ী এই মিডফিল্ডার ম্যাচ শেষে যেন বিশ্বজোড়া কোটি কোটি রোনালদো-ভক্তের মনের কথারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন নিজের বক্তব্যে, ‘আমাদের দলের জন্য ও কখনোই সমস্যা সৃষ্টি করেনি। আপনার দলে যদি ইতিহাসের সেরা স্ট্রাইকার থাকে, তাহলে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কথাও নয়। আজ সে দেখিয়ে দিল, সে কেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ওর পারফরম্যান্স ও বাকি দলের পারফরম্যান্স দুর্দান্ত ছিল আজ।’
তবে রোনালদো তাঁর ক্যারিয়ারে আজ ৫৯তম হ্যাটট্রিকও করেছেন। ইউনাইটেডের হয়ে ২০০৮ সালের পর এটিই তাঁর প্রথম হ্যাটট্রিক। এই হ্যাটট্রিকের কল্যাণেই প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকায় ইউনাইটেড এখন চতুর্থ স্থানে। ২৯ ম্যাচে ৫০ পয়েন্ট তাদের। শেষ চারে থেকে লিগ শেষ করার দৌড়ে ইউনাইটেডের প্রতিদ্বন্দ্বী আর্সেনাল ২৫ ম্যাচে ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে আছে পঞ্চম স্থানে।