#pravati sangbad digital desk:
কুলদীপ যাদব, শ্রেয়াস আইয়ার, সঞ্জু স্যামসন। ভারত দলে জায়গা পাকা করতে না পারলেও মাঝেমধ্যেই জাতীয় দলে ডাক পড়ে তাঁদের। সম্ভাবনা জাগিয়েও হতাশা জাগানোতে বেশ মিল আছে তাঁদের। আরেকটি জায়গায় মিল আছে, এঁরা সবাই ভারতের হয়ে ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা না দিলেও আইপিএলের সুবাদে আরেকটি নামও হয়তো জানা, দীপক হুদা।
হঠাৎ করে এঁদের স্মরণ নেওয়া কেন? কারণ, গত এক দশকে শুধু এ দলটাই ভারতকে হতাশ করেছে। যুব বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হওয়া একমাত্র ভারত দল ছিল ২০১৪ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া যাদবরা। গতকাল রাতে অ্যান্টিগায় অস্ট্রেলিয়াকে ৯৬ রানে হারিয়ে ফাইনালে চলে গেছে ভারত। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ড স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে চারবারের চ্যাম্পিয়নরা।
এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ভারত। ২০১০ বিশ্বকাপের পর এ নিয়ে পাঁচবার। ভারতীয় ক্রিকেটে পাইপলাইন দিন দিন আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে—এ নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ থাকলে এই পরিসংখ্যান সেটা ঘুচিয়ে দিতে সাহায্য করবে। প্রতিটি বিশ্বকাপে একগাদা আনকোরা ক্রিকেটার নিয়ে খেলতে গিয়েও টানা এই সাফল্য ভারতীয় ক্রিকেটের তৃণমূলের শক্তি বুঝিয়ে দিচ্ছে।
গতকাল অস্ট্রেলিয়া সেটি টের পেয়েছে ভালোভাবে। অস্ট্রেলিয়ান তিন পেসার ভারতকে চেপে ধরেছিলেন শুরুতে। ৮ ওভার শেষে ১ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৮ রান ছিল ভারতের। ১৩তম ওভারে অন্য ওপেনারকেও হারিয়েছে ভারত। দলের রান তখন ৩৭। সেই দলই ৫০ ওভার শেষ করেছেন ২৯০ রানে। ম্যাচ তো তখনই শেষ হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক কুপার কনোলি ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘শেষ ১০ ওভারের আগে আমরা ভালোভাবেই ম্যাচে ছিলাম। কিন্তু ওরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে গেছে এবং ১০০ রান করেছে। ২৯০ রান আমাদের জন্য একটু বেশি।’
৪৮তম ওভারে ভারতের রান যখন আড়াইশো ছাড়িয়েছে, তখনই অস্ট্রেলিয়ার কাজ কঠিন হয়ে গিয়েছে। যুব ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার যে এত রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড মাত্র একবার। আর এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে কোনো দলই এত রান তাড়া করতে পারেনি। কিন্তু ভারত শুধু আড়াইশো করেই থামেনি। শেষ ৩ ওভারে ৪৮ রান তুলে ২৯০ তুলছে দলটির লেট মিডল অর্ডার। দীনেশ বানা ৪ বলে তুলেছেন ২০ রান। শেষ ওভারে টম হুইটনির বলে এসেছে ২৭ রান। শেষ ১০ ওভারে এসেছে ১০৮ রান। প্রথম ২৫ ওভার শেষেও ভারতের রান ছিল ৮৬।
এই ভারত দল কত পরিণত, সেটাই বোঝা গেছে ইনিংসের নানা পর্যায়ে দলটির রানে। ৩৭ রানে দুই উইকেট হারানোর পর উইকেটে ছিলেন অধিনায়ক যশ ধুল ও সহ–অধিনায়ক শেখ রশীদ। করোনাক্রান্ত হওয়ায় মধ্যে ১০ দিন ছিলেন না। কাল মাত্র তৃতীয়বারের মতো খেলেছেন দুজন। আর কালই নিজেদের চিন্তাশক্তির গভীরতা দেখিয়েছেন। ইনিংসের শুরুতে রান তোলার জন্য বাড়তি কোনো চেষ্টাই দেখাননি দুজন। শুধু ফিল্ডিংয়ের ফাঁক গলে এক-দুই নিয়েছেন। ২১৩ থেকে ২৮ ওভারের মধ্যে এসেছে মাত্র ৩টি চার। তবু ২৮ ওভারের ১০০ করেছে ভারত, শুধু প্রান্ত বদল করেই ভিত্তি গড়েছেন ধুল ও রশীদ।
দলকে এক শ পার করানোর পর হাত খুলেছেন দুজন। ৩১তম ওভারে ৫০ পেয়েছেন ধুল, ৬৪ বলেই। এক প্রান্তে ধুলের আক্রমণ ৩৬ ওভারেই ভারতকে ১৫০ এনে দিয়েছে। ওদিকে রশীদ অবশ্য টিকে থাকার পক্ষেই ছিলেন। ৫০ পেতে পেতে ৭৯ বল লেগেছে তাঁর। কিন্তু ভারতের ততক্ষণে ম্যাচ জেতা নিশ্চিত। এই বিশ্বকাপের অ্যান্টিগার কুলিজে কোনো দলই যে ২০০ করতে পারেনি।
পঞ্চাশ পেরোতেই রশীদও হাত খুলে মারতে লাগলেন। আগ্রাসী হতে সময় নিলেও একপর্যায়ে ধুলকে টপকে গিয়েছিলেন সহ–অধিনায়ক। ৪৪ ওভার শেষে সমান ১০৩ বল খেলছেন দুজন। ধুলের রান তখন ৯০, আর রশীদের ৯১! কিন্তু পরের ওভারেই সতীর্থকে টপকে গেছেন ধুল। টানা দুই চারে ৯৮–তে পৌঁছান। পরের বলে দুই রান নিয়ে করেছেন শতক। বিরাট কোহলি, উন্মুক্ত চাঁদের পর তৃতীয় ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে শতক করলেন ধুল। পরের বলেই নিজের একমাত্র ছক্কা মেরেছেন অধিনায়ক।
৪৬তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার আশা জেগেছিল। পঞ্চম বলে রশীদের এক শটে হাত লাগিয়ে অন্য প্রান্তে ধুলকে রান আউট করে দেন নিসবাত। পরের বলে রশীদ নিজেও আউট! ১১০ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ঠিক ১১০ করেছেন ধুল ওদিকে ১০৮ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৯৪ রানে আউট রশীদ। ৪৭ ওভারে সালজমান কোনো রান দেননি। ৪৯তম ওভারেও দিয়েছেন মাত্র ৬ রান। কিন্তু ৪৮ ও ৫০ ওভারে ৪২ রান তুলে ভারত নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যায়।
রান তাড়ার কোনো পর্যায়েই মনে হয়নি অস্ট্রেলিয়া জিততে পারে। দারুণ ফর্মে থাকা রবি কুমারের প্রথম ওভারে আউট টিগ উইলি। ক্যাম্পবেল কেলাওয়ে ও কোরি মিলার ধুল ও রশীদের পথে এগোতে চেয়েছিলেন। ১৫ ওভারের বেশি সময়ে ৬৮ রান যোগ করেছেন দুজন। কিন্তু ৭ বল ও ২ রানের মধ্যে দুজনই আউট হয়ে যান। ১ উইকেট থেকে ৭ উইকেটে ১২৫ হয়ে গেছে ভারতীয় স্পিনারদের সুবাদে। অফ স্পিনার কৌশল তাম্বে ও তিন বাঁহাতি অংকিশ রঘু বংশী, ভিকি ওস্তোয়াল ও নিশান্ত সিন্ধু ১১০ রানে ৭ উইকেট নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া ৪১.৫ ওভারে থেমে গেছে ১৯৪ রান করে।