#Pravati Sangbad Digital:
জমজমাট ডার্বি ম্যাচে মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল দ্বৈরথ আবার দেখা গেল, গতকালের ম্যাচটি তত্থ্য টানটান উত্তেজনাময় ছিল। ইস্টবেঙ্গলের কোচ মারিও রিবেরার কাছে গতকালের ম্যাচটি ছিল নিজেদের সম্মান বাঁচানোর ম্যাচ, গত পাঁচটি ডার্বি ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান এর কাছে হেরে গেছে, তার কারণেই গতকালের ম্যাচটি তাদের কাছে নিজেদের হারানো সম্মান ফিরে পাওয়ার লড়াই ছিল। ও অপরদিকে মোহনবাগানের কাছে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে প্রথম চারে যাওয়াই লক্ষ্য ছিল তাতে তারা যথেষ্ট সফল হয়েছে। মোহনবাগান টিম পয়েন্ট পাওয়ার সাথে সাথেই তারা পেয়েছে তাদের নতুন ভবিষ্যতের উজ্জ্বল তারকাকে, তিনি হলেন একসময় মোহনবাগানের ডিফেন্সে ত্রাস তৈরি করা মিডফিল্ডার জামশিদ নাসিরীর সন্তান কিয়ান নাসিরি। গতকালের ম্যাচে তিনি মোহনবাগানকে জেতানোর সাথে সাথে করলেন তার প্রথম হ্যাটট্রিক ও।
এটিকে মোহনবাগানের কোচ জুয়ান ফেরান্ডো তার দলকে সাজিয়েছিল ৪-২-৩-১ ছকে, তাদের গোলকিপার ছিলেন আমৃন্দর সিং, ডিফেন্সে ছিলেন প্রবীর দাস, প্রীতম কোটাল, তিরি ও শুভাশিস বোস, মিডফিল্ডে ছিলেন দীপক তাংরী, মানবীর সিং, লীষ্টন কোলাসো, হুগো বৌমস ও ডেভিস উইলিয়ামস। ৬০ মিনিটে দীপক তাংরীর পরিবর্তে মাঠে আসেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন স্ট্রাইকার জামশেদ নাসিরির ছেলে কিয়ান নাসিরি, যার মাঠে নেমে প্রথম বার বল ছোঁয়াতেই গোল এসেছিল ৬৪ মিনিটে, তার বাবা ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলে অনেকবার মোহনবাগানকে হারালেও তিনি গত কাল তার হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে ইস্টবেঙ্গল কে পর্যদস্ত করেন।
ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচ মারিও রিভেরা তাদের দলকে তার পুরনো ছকে ৪-৪-২ এ সাজিয়েছিলেন। তাদের আক্রমণে ছিলেন পেরোসেভিচ, মার্সেলো রিবেরো, তাদের মিডফিল্ডার ছিলেন সৌরভ দাস, দারেন সীদোয়েল, তাদের ডিফেন্সের ছিলেন অঙ্কিত মুখার্জি, আদিল খান, প্রেস, হীরা মণ্ডল ইত্যাদিরা, এবং গোলরক্ষক হিসেবে ছিলেন অরিন্দম মুখার্জি। কিছু সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে অরিন্দম মুখার্জী ইস্টবেঙ্গল ছাড়তে চলেছেন।
গতকালের খেলায় প্রথমার্ধে থেকে দুই দলের আক্রমণে যথেষ্ট থাকলেও তারা তাদের ভুল পাসিং এর জন্য অনেক অনেক সুযোগ নষ্ট করেছেন, ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান দুইদলের ডিফেন্স যথেষ্ট পাকাপোক্ত ছিল। বলে রাখা ভাল ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্স পাকাপোক্ত ছিল তাদের প্রথম গোল হজম করা পর্যন্ত, তারপরেই ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স একের পর এক ভুল করতে থাকে ও সবমিলিয়ে তিন গোল হজম করে তারা। কিন্তু তা ছাড়াও প্রথমার্ধে তাদের ডিফেন্স যথেষ্ট ভাল প্রদর্শন করেছিল। প্রথমার্ধে মোহনবাগানের কোলাসোর মাঠের ডান দিক দিয়ে দৌড় ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স কে একটু হলেও বিব্রত করেছিল, ও তার সাথে সাথে তাহার দূরপাল্লার শট যথেষ্ট মন কেরেছে মোহনবাগান সমর্থক দের। প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গল অনেকগুলি সহজ সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু তারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ইস্টবেঙ্গল আক্রমণ করতে থাকে ও ৫৬ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের সীদোয়েল কর্নার থেকে একটি গোল করেন ও ইস্টবেঙ্গল কে ১-০ গোলে এগিয়ে দেয়। মোহনবাগান দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পিছিয়ে যাওয়ার পরেও ৬০ মিনিটের মাথায় দীপক টাংরিকে তুলে মাঠে আনে কিয়ান নাসিরিকে, সেখান থেকেই সম্পূর্ণ ম্যাচটি মোহনবাগানের দিকে এগিয়ে যায়। মোহনবাগানের কোচ রয় কৃষ্ণা কে প্রথম ১১ এ না রাখা এবং দ্বিতীয়ার্ধেও কৃষ্ণাকে না নামানোয় ক্ষুব্দ হয়েছিল মোহনবাগান সমর্থকরা, কিন্তু তারপর কি আর নাসিরের দুর্দান্ত খেলা সমর্থকদের মন কেড়ে নেয়, ও রয় কৃষ্ণার অনুপস্থিতি অনেকটাই মুছে দেয়। ৬৪ মিনিটে নাসিরি প্রথম গোল করে সমতায় ফেরায় মোহনবাগানকে, তারপরে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স ভাঙতে থাকে ও মোহনবাগানকে একটি পেনাল্টি পুরস্কার হিসাবে দিয়ে দেয়, যেখান থেকে ডেভিড উইলিয়াম ম্যাচটি পেনাল্টি মিস করে, সেখান থেকেই গেল গেল রব শুরু হয় মোহনবাগান সমর্থকদের মধ্যে। কিন্তু খেলার শেষ দিকে এক্সট্রা স্টপেজ টাইমে কিয়ান নাসিরি পরপর দুটি গোল দিয়ে মোহনবাগানকে জয় এবং নিচের প্রথম হ্যাটট্রিকটি পেয়ে যান তিনি। ও খেলা শেষ হয় ৩-১ স্কোর নিয়ে, এবং মোহনবাগান জয়ী।