#প্রাভাতী সংবাদ:
গত কয়েক বছর এর মত এই বছরেও মাওবাদীদের “ভুত” পিছু ছাড়ছেনা পুলিশের। এই বছরেও প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে রেল স্টেশন, ট্রেনে বিভিন্ন জায়গায় মাওবাদীদের হামলা চালাতে পারে বলে দেশবাসীকে সতর্ক করেছে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ। এছাড়াও মাওবাদীরা হামলা করতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা, মোবাইল টাওয়ার, পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্পেও।
একুশের নির্বাচনের পর জেলায় জেলায় কয়েকবার মাওবাদীর পোস্টার দেখা গিয়েছিল। তারপর থেকেই মাওবাদী হামলা নিয়ে সতর্কতা আসায় পুলিশকে নজরদারি চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাওবাদী কার্যকলাপ নিয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে পুলিশবাহিনীকে। সমস্ত রেলস্টেশন এবং সংলগ্ন এলাকায় দিন-রাত নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হঠাৎ মাওবাদীদের এই হামলার সিন্ধান্ত সম্পর্কে গোয়েন্দাদের দাবি, তাদের শীর্ষ নেতা “কিষানদা”-কে গ্রেফতারের করার প্রতিশোধ নিতেই মাওবাদীদের এই হামলা। তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে শোনা গিয়েছে, বাংলায় গত কয়েকবছরে মাওবাদী হামলার ঘটনা ঘটেনি। এ রাজ্যে এখন নাকি মাওবাদীদের উৎপাত নেই, এমন কথাও বলতে শোনা গিয়েছে রাজ্য সরকারকে। কিন্তু এ কথা সত্য নয়। চলতি সপ্তাহে পাঠানো বার্তায় ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন কার্যকলাপের কথা তুলে ধরে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুত্রের খবর, মাওবাদীরা প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ঝারগ্রাম-গিধনি, খ্রগপুর-আদ্রা, পুরুলিয়া-বিরামডি, পুরুলিয়া- মুড়ি, ঝালদা-বোকারো, সিউড়ি-অন্ডাল রেল রুটের বিভিন্ন জায়গায় হামলা হতে পারে। এছাড়াও জঙ্গলমহলে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় ঝালদা, বাগমুন্ডি, বরাবাজার, বেলপাহাড়ি, জামবনি, ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে পুলিশবাহিনীকে। জঙ্গলমহলে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও সতর্ক করা হয়েছে।
সম্প্রতি খবর পাওয়া গিয়েছে, মাওবাদীদের পলিটব্যুরো সদস্য তথা পূর্বাঞ্চলের মাথা ও শীর্ষ নেতা কিষানদার গ্রেফতারের প্রতিবাদে ২৭ শে জানুয়ারি বন্ধের ডাক দিয়েছে। কিন্তু এই খবর ছাড়াও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, মাওবাদীরা ২৬ শে জানুয়ারি বড় কোনও নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। সেই পরিকল্পনার মধ্যেই রয়েছে নেতা-বিধায়ক-সাংসদদের উপর আক্রমণ। তাই রাজ্যের শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে আরও সতর্কবার্তা এসেছে, হামলা হতে পারে কলকাতা মেট্রোয়। সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে কলকাতা মেট্রোতে। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, এখানে হামলা হওয়ার সম্ভবনা আছে। তাই সেখানের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যেই প্রায় সাড়ে ৮০০ রেলপুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, প্রতিটি স্টেশনে মোতায়েন থাকবে রেল পুলিশকর্মীরা। বিভিন্ন শিফট ভাগ করে তাঁদের রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে রাখা হয়েছে কুইক রেসপন্স টিম। প্রতিটি টিমে থাকবেন ৫ থেকে ৬ জন করে নিরাপত্তাকর্মী। এছাড়াও মহিলা ও শিশু যাত্রীদের জন্য বিশেষ মহিলা সিকিউরিটি টিম রাখা হয়েছে। স্টেশনগুলিতে সকাল থেকে স্নিফার ডগ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। মেট্রোর সমস্ত সম্পতির উপর, ইলেক্ট্রিক ইন্সটলেশনের উপর বাড়তি নজরদারি রাখা হচ্ছে। এরই সঙ্গে নজরদারি থাকবে মেট্রোরেলের কারশেডেও। এই বিষয়ে কলকাতা মেট্রো রেলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “নাশকতামূলক কার্যকলাপ যাতে কলকাতা মেট্রোতে না ঘটে এবং তা রুখতে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। হামলা ঠেকাতেও আমরা প্রস্তুত আছি।”