রথযাত্রার দিনে ফের চূড়ান্ত অব্যবস্থার ছবি ধরা পড়লো ওড়িশার পুরীতে। ভিড় সামলাতে ব্যর্থ পুলিশ প্রশাসনের কারণে রবিবার ভোরে গুন্ডিচা মন্দিরের সামনে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন অন্তত তিনজন পুণ্যার্থী। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫০ জন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন বাসন্তী সাহু, প্রমকান্ত মোহান্তি এবং প্রভাতী দাস। তিনজনই খুরদা জেলার বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার ভোর সাড়ে চারটা থেকে গুন্ডিচা মন্দিরের সামনে ভক্তদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। রীতি অনুযায়ী, এদিন প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার রথ থেকে মন্দিরে প্রবেশের অনুষ্ঠান ছিল। ভক্তরা প্রভুকে রথে আসীন অবস্থায় শেষবারের মতো দর্শনের জন্য ভিড় জমাতে থাকেন। ঠিক সেই সময় মন্দিরের কাছে রীতি পালনের জন্য সামগ্রী নিয়ে একটি বড় গাড়ি প্রবেশ করে। গাড়ির আগমনে ভিড়ে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। চাপের মুখে ভেঙে যায় ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি অস্থায়ী ব্যারিকেড। মুহূর্তেই সৃষ্টি হয় আতঙ্ক। ভক্তদের একাংশ মাটিতে পড়ে যান এবং তাতেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তিনজনের। পুলিশের তৎপরতায় দ্রুত পরিস্থিতি আংশিক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এতো বড় উৎসবের দিনেও পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল না। ভিড় নিয়ন্ত্রণে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা ছিল না। প্রশাসনের অব্যবস্থা এবং গাফিলতির কারণেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বলে দাবি স্থানীয়দের। ঘটনার পরই শোকপ্রকাশ করেছেন ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন। তিনি জানিয়েছেন, “দুর্ঘটনার কারণ জানতে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা গাফিলতি করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, এ বছরের তুলনায় এবার প্রায় দেড়গুণ বেশি ভক্ত পুরীতে এসেছেন। আইনমন্ত্রী বলেছেন, “ভালো আবহাওয়ার কারণে ভিড় অনেক বেশি হয়েছে। এই অতিরিক্ত ভিড়ই মূলত সমস্যার কারণ।”
রথ টানলে দুর্গা আসে”: লোকবিশ্বাস, উৎসব ও বাংলার সাংস্কৃতিক আবেগের গল্প
উল্লেখ্য, এর আগেও মাত্র দু’দিন আগে শুক্রবার রথযাত্রার সময় একই ধরনের পদপিষ্টের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তখনও পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছিল। এবার মৃত্যুর ঘটনা ফের প্রশাসনের অব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। রাজ্যজুড়ে এই দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপি শাসিত সরকারের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ স্পষ্ট। পুরীর রথযাত্রা শুধু ওড়িশা নয়, গোটা দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই উৎসবে অংশ নিতে আসেন। এমন অবস্থায় নিরাপত্তা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আরও কঠোরভাবে দেখা উচিত ছিল বলে মনে করছেন অনেকে। প্রশাসনের গাফিলতি ও অপর্যাপ্ত প্রস্তুতির মাশুল দিতে হলো নিরীহ ভক্তদের প্রাণ দিয়ে।