আশঙ্কা সত্যি করেই মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ল ভয়ঙ্কর যুদ্ধের ছায়া। ইরান-ইজরায়েল উত্তেজনার মাঝে এবার সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করল আমেরিকা। শুক্রবার ভোরে তেহরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে সফলভাবে বোমা বর্ষণ করেছে মার্কিন সেনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার কথা নিশ্চিত করেছেন। এর পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরান স্পষ্ট জানিয়েছে— এই লড়াই শুরু করেছে আমেরিকা, কিন্তু শেষ করবে ইরান।
আমেরিকার সামরিক বাহিনী ইরানের ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহান এই তিনটি উচ্চসুরক্ষা সম্পন্ন পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্রে সফলভাবে বোমা বর্ষণ করেছে বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস। এই পদক্ষেপকে ‘প্রতিরক্ষামূলক’ বলে ব্যাখ্যা করলেও আন্তর্জাতিক মহলে এর জেরে বড়সড় সংকট তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। হামলার সত্যতা স্বীকার করে ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, এই আক্রমণ তাদের পরমাণু শক্তিধর হয়ে ওঠার পথে বাধা হতে পারবে না। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পাজেস্কিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইহুদি রাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ক্রমাগত আক্রমণের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে, এবং সেই জবাব হবে ভয়াবহ।” ইরানের বিদেশমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া বার্তায় তিনি লেখেন, “আজকের সকালে আমেরিকার কাজ ছিল বেআইনি, বিপজ্জনক এবং অপরাধমূলক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই সতর্ক হওয়া উচিত।”আরও উদ্বেগজনক বার্তা এসেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের উপস্থাপকের বক্তব্য থেকে। তিনি সরাসরি বলেন, “এখন থেকে প্রতিটি মার্কিন নাগরিক ও সেনা আমাদের বৈধ লক্ষ্যে পরিণত হবে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, মিস্টার ট্রাম্প।” আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল এই বক্তব্যকে কেবল প্রচার নয়, বরং সরকারি অবস্থান বলেই বিবেচনা করছে।
পহেলগাঁও হামলার দুই মাস পরে লস্কর জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করল এনআইএ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে গোটা বিশ্ব জুড়ে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ভয়াবহভাবে প্রভাবিত হতে পারে। এমনকি অনেকেই এটিকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার সূচক বলেও চিহ্নিত করছেন। ইতিমধ্যেই আমেরিকার অভ্যন্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে ইরান— এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইরান-ইজরায়েল উত্তেজনা থেকে শুরু হওয়া এই সংকট ক্রমেই আন্তর্জাতিক যুদ্ধের রূপ নিতে চলেছে। আমেরিকার সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ ও ইরানের পাল্টা প্রতিশ্রুত প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে— সেই দিকে এখন তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব।