মঙ্গলবার নতুন করে উত্তপ্ত হয়েছে নেপাল। নেপালের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাসভবন দখল করে ফেলেছে বিক্ষোভকারীরা। সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে নেপালে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আগুন লাগানোর ঘটনায় উত্তেজনা তুঙ্গে। বিক্ষোভের জেরে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং জোট সরকার ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নেপালের পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। নয়া প্রজন্মের আন্দোলনে উত্তাল গোটা দেশ। নেপালের প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত বাসভবন দখল করে নিয়েছে তারা। জ্বলছে সেদেশের রাষ্ট্রপতি ভবন। ইতিমধ্যেই দেশ ছাড়ার জন্য হেলিকপ্টারে চেপেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি, তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সাত মন্ত্রী। ছাত্র-যুবদের আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি রাজধানী কাঠমান্ডু-সহ একাধিক শহরে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিকে ইস্তফা দিতে বললেন সেদেশের সেনাপ্রধান। সেই দাবি মেনে ইস্তফাও দিয়ে দিলেন তিনি। এমনটাই দাবি, নেপালি সংবাদমাধ্যমের। এদিকে জানা যাচ্ছে, মন্ত্রীদের সেনা হেলিকপ্টারে দ্রুত নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বন্ধ বিমানবন্দর। বাতিল সমস্ত উড়ান। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি রীতিমতো অগ্নিগর্ভ। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পর নেপাল!
নেপালের অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পৌড়েলকে মারধর করা হচ্ছে বলে শোনা গিয়েছে। সংসদ ভবনের সমস্ত গেট খুলে দিয়েছে সেনা। ঢুকে পড়ছে উন্মত্ত জনতা।
কাঠমান্ডু উপত্যকায় ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউনিফাইড মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট) বা সিপিএন (ইউএমএল) এবং নেপালি কংগ্রেসের দলীয় সদর দপ্তরও ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তীব্র বিক্ষোভের পর ওলি তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ‘জেন জি প্রোটেস্ট’ নামে পরিচিত এই অস্থিরতার নেতৃত্ব মূলত ২৮ বছরের কম বয়সী তরুণরা দিচ্ছে। একদিন আগে, হাজার হাজার মানুষ সংসদের বাইরে জড়ো হয়েছিল, যাদের অনেকেই স্কুল ইউনিফর্ম পরে ছিল। পুলিশ জনতার উপর গুলি চালানোর পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে ১৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায়, নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেন এবং বলেন যে তিনি এই ট্র্যাজেডির নৈতিক দায়িত্ব নিচ্ছেন। ওলির পদত্যাগের পরেই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভেসে আসছে বালেন্দ্র শাহের নাম। প্রধানমন্ত্রী মোদি সেনার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক কলকাতায়
কাঠমান্ডুর ১৫তম মেয়র বালেন্দ্র শাহ (বালেন শাহ নামেও পরিচিত) কেবল একজন রাজনীতিবিদই নন, একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং র্যাপারও। অনেক তরুণ নেপালিদের কাছে তিনি আশা এবং পরিবর্তনের প্রতিনিধি। বালেন মেয়র পদে জয়লাভ করার পর, মানুষ তাকে ভবিষ্যতে একজন সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে শুরু করেন।
নতুন শক্তির একটি স্পষ্ট ফলাফল ছিল রবি লামিছানের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় স্বাধীন পার্টি (আরএসপি) এর উত্থান।
তার সবচেয়ে বড় শক্তি হল তার পরিষ্কার ভাবমূর্তি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অসহনশীলতা নীতি, যার ফলে তিনি জনগণের গভীর শ্রদ্ধা এবং জোরালো সমর্থন অর্জন করেছেন।
জনকণ্ঠ রোধে সোশাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞার অভিযোগে সোমবার সকালে তরুণ তুর্কিদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল নেপালে, রাতের মধ্যে তা হিংসাত্মক চেহারা নেয়। পুলিশ, এমনকী সেনার প্রতিরোধেও কাজ হয়নি। এর ফলে বিপ্লবের বলি হয় ২১ জন। আহত তিনশোর বেশি। এই অবস্থায় সোমবার গভীর রাতে সোশাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। যদিও এরপরেও আন্দোলন থামেনি। দুর্নীতির অভিযোগে ওলি সরকারকে গদিচ্যুত করার ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। নতুন জিএসটি হারে জিনিসের দাম কমবে
এই অস্থিরতার মধ্যে, ব়্যাপার থেকে রাজনীতিবিদে পরিণত মিঃ শাহ বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন।
নেপালের আঁচ যাতে এ রাজ্যে না পড়ে, তার জন্য নেপাল-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। সোমবার রাতেই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এই বিষয়ে দার্জিলিং-এর পুলিশ সুপার এবং নেপালের সীমান্তবর্তী এলাকার অন্যান্য পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলেন।
সীমান্ত এলাকায় পাঠানো হচ্ছে বিশাল ফোর্স। র্যাফ থেকে শুরু করে কমব্যাট ফোর্স নামানো হচ্ছে সব বাহিনী। মিরিক সংলগ্ন পশুপতি নগর, পানিট্যাঙ্কি , কাঁকরভিটা এলাকায় ইন্টেলিজেন্স বাড়ানোর নির্দেশ দিছেন ডিজিপি।
রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে লেখা পদত্যাগপত্রে ওলি লিখেছেন, ‘‘নেপালের সংবিধান অনুযায়ী আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সমস্যার সমাধানের উপায় খুঁজতে, রাজনৈতিক ভাবে সমাধান করতে আমি পদত্যাগ করছি।’’ নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল ওলির ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেছেন। সকালের ৭টি ডিটক্স ওয়াটার রেসিপি
ওলির পাশাপাশি তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যেরাও বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। মন্ত্রীদের অনেকের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা।