প্রয়াত হলেন দেশের প্রবীণতম যোগী ও যোগ-দর্শনের জীবন্ত প্রতিমূর্তি স্বামী শিবানন্দ বাবা। শনিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বারাণসীর হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সুন্দরলাল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১২৯ বছর—হ্যাঁ, ১২৯ বছর, যা নিজেই এক বিস্ময়।
প্রসঙ্গত, ১৮৯৬ সালের ৮ আগস্ট অবিভক্ত ভারতের সিলেটে (বর্তমান বাংলাদেশ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি, স্বামী বিবেকানন্দের ঐতিহাসিক শিকাগো বক্তৃতার তিন বছর আগে। দীর্ঘজীবনের রহস্য? পরিমিত আহার, কঠোর অনুশীলন, নিয়মিত যোগাভ্যাস এবং নির্লোভ, নির্মোহ জীবনচর্চা—এটাই ছিল তাঁর "জীবনমন্ত্র"। ২০১৯ সালে কলকাতার দুটি সুপ্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে ‘সম্পূর্ণ সুস্থ ও সক্ষম’ বলে ঘোষণা দেয়। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ১২৩ বছর। আশ্চর্যের বিষয়, শারীরিকভাবে অটুট স্বামীজিকে চলাফেরায় কখনও লাঠির সাহায্য নিতে দেখা যায়নি। চোখে মুখে ছিল শিশুর মতো উজ্জ্বলতা, কণ্ঠে ছিল বিশ্বাস ও উপলব্ধির ছন্দ।২০২২ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করে। রাষ্ট্রপতি ভবনে ওই সম্মান গ্রহণ করতে গিয়ে তাঁর সাষ্টাঙ্গ প্রণামের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশজুড়ে মানুষ অনুপ্রাণিত হন। সে সময় তিনি বলেন, “আমি সবার মধ্যেই শিবকে দেখি। তাই এ প্রণাম।”
উলেখ্য, স্বামীজির মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছেন তাঁর অন্যতম পরিষদ সঞ্জয় সর্বজ্ঞ। তিনি জানান, স্বামীজির পার্থিব দেহ রবিবার পর্যন্ত বারাণসীর কবীরনগরে তাঁর আশ্রমে শায়িত থাকবে, যাতে দেশ-বিদেশ থেকে আসা অনুগামীরা শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। স্বামী শিবানন্দের জীবন কেবল দীর্ঘ নয়, ছিল অসাধারণ অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। শৈশবে তিনি সময় কাটিয়েছেন এলগিন রোডের সেই বাড়িতে, যেখানে থাকতেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। নিজের বয়স নিয়ে তিনি প্রায়ই বলতেন, “আমি নেতাজির থেকেও বড়। আমি বেঁচে থাকলে নেতাজি কেন থাকবেন না?”ভারতের প্রাচীন যোগসাধনার ঐতিহ্যকে আধুনিক যুগে নতুন আলোয় তুলে ধরেছিলেন তিনি। তাঁর অনুগামীদের কাছে তিনি শুধু একজন সাধু নন, ছিলেন প্রেরণা, ছিলেন জীবন্ত আশীর্বাদ। আজ, তিনি হয়তো শারীরিকভাবে অনুপস্থিত, কিন্তু তাঁর ত্যাগ, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও যোগ-সাধনার আদর্শ যুগের পর যুগ পথ দেখাবে। তাঁর চিরন্তন বিশ্বাস ছিল, যোগই হলো জীবনের আসল ঔষধ। সেই বিশ্বাস নিয়েই হয়তো এবার তিনি পাড়ি দিলেন চিরশান্তির পথে—শিবলোকের দিকে।