পুলওয়ামা বা উরি পরবর্তী নতুন করে উত্তাল ভারতীয় উপমহাদেশ। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ২৬ জন নিরাপত্তারক্ষী ও সাধারণ মানুষ। পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীর উপর সন্দেহ ঘনীভূত হওয়ার পরপরই উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে দিল্লি-ইসলামাবাদ অক্ষে। আন্তর্জাতিক মহলও দ্বিধাবিভক্ত, যার কেন্দ্রে রয়েছে চিন ও আমেরিকার পরস্পরবিরোধী অবস্থান।
প্রসঙ্গত, পহেলগাঁও হামলার পরপরই রবিবার চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-এর বিবৃতি বিশ্ব কূটনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ওয়াং পাকিস্তানকে "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা দেশ" আখ্যা দিয়ে বলেন, “পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বেজিং তাদের পাশে রয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপে পাকিস্তানের ভূমিকাকে আমরা সর্বদা সমর্থন করে এসেছি।”চিনের এই অবস্থান মূলত তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সম্পর্কেরই প্রতিফলন। সিপিইসি (চীন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোর) প্রকল্প, যৌথ সামরিক মহড়া, এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে একে অপরকে সমর্থন করার ঐতিহ্য চিন-পাকিস্তান সম্পর্ককে একটি কৌশলগত মিত্রতায় পরিণত করেছে। চিনের বিবৃতির কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে মার্কিন বিদেশ দপ্তর জানায়, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে রয়েছে আমেরিকা। আমরা উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানালেও, সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে আমাদের অবস্থান একেবারেই পরিষ্কার।” এই বার্তা কেবল একটি আনুষ্ঠানিক অবস্থান নয়, বরং তা সাম্প্রতিক মার্কিন কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মার্কিন বিদেশনীতি মূলত চিনবিরোধী রূপ নিয়েছে। ৭১-এর যুদ্ধে পাকিস্তানের পাশে থাকা আমেরিকা এখন চিনকে কৌশলগতভাবে চাপে রাখতে ভারতের ঘনিষ্ঠতার পথ বেছে নিয়েছে।
রাফাল যুদ্ধবিমানের নতুন চুক্তি: ভারতীয় নৌসেনার শক্তি বৃদ্ধির পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
উলেখ্য, বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনা আধিপত্য প্রতিরোধে আমেরিকার কাছে একমাত্র ভরসা ভারত। পাশাপাশি আমেরিকা-চিন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটনের কাছে দিল্লি হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক অংশীদার। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণই আমেরিকাকে ভারতের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-চিন-পাকিস্তান-আমেরিকা চতুর্ভুজ কূটনৈতিক সমীকরণ বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। এখানে ‘বন্ধু’ শব্দের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হচ্ছে 'স্বার্থ'। চিন-পাকিস্তান মিত্রতা যতটাই পুরোনো, ততটাই দৃঢ়। অন্যদিকে, আমেরিকা তার নতুন কৌশলগত স্বার্থ রক্ষায় ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ আজ শুধু একটি আঞ্চলিক সমস্যা নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম মোক্ষম হাতিয়ার—যা ব্যবহার করে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে চাইছে। আর সেই হাতিয়ার ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে বর্তমান বিশ্ব কূটনীতির নতুন পরিক্রমা।