৩৩ কোটি দেবতাকে আহ্বান জানিয়ে দিঘায় শুরু হল জগন্নাথদেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠার বিশেষ আচার্য অনুষ্ঠান। রবিবার বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে পুরীর মন্দিরের নিয়ম মেনে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে শুরু হয় এই শুভযাত্রা। আগামী ৩০ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে মন্দিরের দ্বারোদঘাটন ও জগন্নাথদেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে।
প্রসঙ্গত, মহাযজ্ঞের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। শাস্ত্রীয় বিধান মেনে চলছে পুজোপাঠ ও হোমযজ্ঞ। মন্দিরের সামনেই তৈরি অস্থায়ী আটচালা ঘরে দু’বেলা চলছে এই পূণ্য কাজ। পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে আগত ৫৭ জন সেবক এবং ইসকনের ১৭ জন সাধু এই আচার্যতায় অংশ নিচ্ছেন। ২৯ এপ্রিল বিশ্বশান্তির উদ্দেশ্যে আয়োজিত মহাযজ্ঞে পোড়ানো হবে ১০০ কুইন্টাল আম ও বেলকাঠ এবং ২ কুইন্টাল ঘি। মুখ্যমন্ত্রী ২৮ এপ্রিল দিঘায় পৌঁছবেন এবং ৩০ এপ্রিল তাঁর উপস্থিতিতেই মন্দির উদ্বোধন হবে। প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন পুরীর রাজেশ দৈতাপতি, জগন্নাথ মন্দিরের রীতি মেনে। দিঘা জুড়ে এখন উৎসবের পরিবেশ। সকাল থেকেই ভেসে আসছে মাঙ্গলিক সানাইয়ের সুর। আগত পুণ্যার্থীদের জন্য জেলা প্রশাসন তৈরি করেছে বিশেষ ব্যবস্থা। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়ে গিয়েছে ১১৬ বি জাতীয় সড়কে। দিঘা গেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে বিশেষ চেকপোস্ট। যাঁদের গাড়ির বিশেষ পাস থাকবে, তাঁরাই কেবল মন্দির চত্বরে প্রবেশ করতে পারবেন।পুণ্যার্থীদের গাড়ি রাখার জন্য তৈরি হয়েছে একাধিক পার্কিং পয়েন্ট। পাশাপাশি, পুরনো দিঘা থেকে ১১৬ বি সড়ক ধরে বা নিউ দিঘা বাস ডিপো থেকে শনিমন্দির হয়ে মন্দিরে পায়ে হেঁটে পৌঁছনোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ট্রেনযাত্রীরাও ওল্ড দিঘা বা বাইপাস পথ ধরে মন্দিরে যেতে পারবেন। নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। কোলাঘাট থেকে দিঘা পর্যন্ত জাতীয় সড়কের ধারে লাগানো হয়েছে ফ্লেক্স। তমলুক, নন্দকুমার থানা এলাকায় প্রতি ১০০ মিটারে একটি করে ব্যানার বসানো হয়েছে হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে। পুরো রাস্তাজুড়ে সিসি ক্যামেরা নজরদারি এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে থাকছে পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের সিদ্ধান্তে ওষুধ সংকটের মুখে পাকিস্তান
উলেখ্য, পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) শ্যামলকুমার মণ্ডল জানান, “যান নিয়ন্ত্রণে কোনওরকম ছাড় দেওয়া হবে না। যাতে পুণ্যার্থীরা নির্বিঘ্নে মন্দিরে আসতে পারেন, সে জন্য সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার বসিয়ে নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে বাজকুল, চণ্ডীপুর, নন্দকুমার এলাকায়। পর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেন, “আমরা জগন্নাথদেবকে স্বাগত জানাতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এই মন্দির দিঘাকে এক নতুন পরিচয় দেবে।”উদ্বোধনের আগেই দিঘা এখন ভক্তদের পদচারণায় মুখর। জগন্নাথের মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, হয়ে উঠছে আস্থার এক সর্বজনীন মেলবন্ধনস্থল।