পুলওয়ামা হামলার পাল্টা জবাবে ২০১৯ সালে বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার সফল অভিযান ও গ্রেফতার হওয়া উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের স্মৃতি এখনও দেশবাসীর মনে জ্বলজ্বলে। পাকিস্তান সেদিন অভিনন্দনের চা-আয়োজনে প্রচার যুদ্ধে নামলেও, শেষপর্যন্ত ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক চাপে মাথা নত করে তাঁকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল ইসলামাবাদ। আর এবার সেই রকমই এক উদ্বেগজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, ২৪ এপ্রিল, ফিরোজপুর সীমান্তের কাছে কর্তব্যরত অবস্থায় পাকিস্তানি রেঞ্জার্সের হাতে আটক হন হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা ও বিএসএফের ১৮২ নম্বর ব্যাটালিয়নের কিষাণ গার্ড ইউনিটে কর্মরত জওয়ান পিকে সিং। তিনি ইউনিফর্মে ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে ছিল সরকারি সার্ভিস রাইফেলও। পাকিস্তান তাঁকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় বলে বিএসএফ সূত্রে জানা গেছে।ঘটনার পরপরই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষকর্তারা পাকিস্তানের সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের উদ্যোগ নেন। কিন্তু নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় পাকিস্তান রেঞ্জার্স। এই অনীহা ঘিরেই নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক মহলে। প্রশ্ন উঠছে— ফের কি অভিনন্দন বর্তমানের মতো এক কৌশলী চাপ তৈরির পথে হাঁটছে পাকিস্তান? স্বাধীনতার পর থেকে কাশ্মীরসহ একাধিক ইস্যুতে ভারতের বিরুদ্ধে পর পর যুদ্ধ হেরেছে পাকিস্তান। সামরিক শক্তির দিক থেকে ভারতের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়া ইসলামাবাদ এখন কৌশলগত প্রচারযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। বিশেষত, সম্প্রতি পহেলগাঁও-তে জঙ্গি হামলার পর ভারতের পাল্টা পদক্ষেপের আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত পাকিস্তান হয়তো এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে নতুন করে ভারতের উপর কূটনৈতিক চাপ তৈরি করতে চাইছে।
উলেখ্য, পিকে সিং-এর নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে জোর কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করেছে ভারত। একদিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে পাকিস্তান রেঞ্জার্সের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, অন্যদিকে বিদেশমন্ত্রকও বিষয়টি নজরে রেখেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। অভিনন্দন বর্তমানের মতো পরিস্থিতিতে দ্রুত ও কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ভারত। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। তার ফলেই পাকিস্তান মাত্র ৬০ ঘণ্টার মধ্যে অভিনন্দনকে ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছিল। এই অভিজ্ঞতা থেকেই ভারত এবারও প্রস্তুত বলেই সূত্রের খবর।বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান যদি আবারও একতরফা মনোভাব দেখায়, তবে তা শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নয়, বরং আন্তর্জাতিক স্তরেও তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে।