জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরে কড়া বার্তা দিল ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটির (CCS) বৈঠকের পরে কেন্দ্র সরকার একাধিক কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে জঙ্গি কার্যকলাপে মদত দেওয়া বন্ধ না করলে তাৎক্ষণিকভাবে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রাখা হবে।
১. সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত: ১৯৬০ সালের ভারত-পাকিস্তান সিন্ধু জলচুক্তি, যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের জলবণ্টন চুক্তি হিসেবে পরিচিত, সেটি অবিলম্বে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে যতদিন না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করছে।
২. আটারি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট বন্ধ: ভারতীয় সীমান্তের আটারি চেকপোস্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেসব ব্যক্তি বৈধ কাগজপত্রে সীমান্ত পার হয়েছেন, তারা ১ মে’র মধ্যে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এরপর এই রুট দিয়ে যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।
৩. সার্ক ভিসা বাতিল: সার্ক ভিসা প্রকল্পের আওতায় থাকা সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিকের ভিসা বাতিল বলে গণ্য করা হবে। বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪. সামরিক উপদেষ্টাদের দেশত্যাগের নির্দেশ: নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনে কর্মরত প্রতিরক্ষা, সেনা, নৌসেনা এবং বায়ুসেনা বিভাগের উপদেষ্টাদের ‘অবাঞ্চিত ব্যক্তি’ ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। একইভাবে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মরত সামরিক উপদেষ্টাদেরও প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
৫. হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা হ্রাস: উভয় দেশের হাইকমিশনেই সামরিক উপদেষ্টা সহ অন্যান্য কর্মীদের সংখ্যা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা হচ্ছে। মে মাস থেকে এই সংখ্যা ৫৫ থেকে ৩০-এ নামিয়ে আনা হবে।
সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ জন ভারতীয় এবং ১ জন নেপালি নাগরিক। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’, যা মূলত লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন হিসেবে পরিচিত। ভারত সরকারের বক্তব্য, জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তিপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চলমান উন্নয়নকে বানচাল করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। বিদেশ সচিব স্মরণ করিয়ে দেন, ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী তাহাউর রানাকে সম্প্রতি আমেরিকা থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থান এই পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হল।
পহেলগাঁও হামলার নেপথ্যে লস্কর-ই-তৈবার ‘মাস্টারমাইন্ড’ সইফুল্লা কসৌরি, দায় স্বীকার TRF
উলেখ্য, ২০১৬ সালে উরি হামলার পরে চালানো সার্জিক্যাল স্ট্রাইক কিংবা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পরে এয়ার স্ট্রাইকের মতো সামরিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সরকার এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। তবে সামরিক অপশন উড়িয়ে দেওয়া হয়নি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।এই ঘটনাপ্রবাহ শুধু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করার মতো সিদ্ধান্ত এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ যা আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারত সরকারের কঠোর মনোভাব স্পষ্ট করে।