জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ ভয়াবহ জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্কর-ই-তৈবার ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা সামনের সারির জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই হামলার মূল মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সইফুল্লা খালিদ কসৌরি-কে, যাকে লস্কর-ই-তৈবার ডেপুটি চিফ এবং হাফিজ সইদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে বিবেচনা করা হয়।
উলেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে সংগঠিত হওয়া হামলায় সরকারি হিসেবে এখনও পর্যন্ত ২৮ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে, যদিও বেসরকারি সূত্রে মৃতের সংখ্যা ৩২ জন বলেই জানা যাচ্ছে। হামলায় আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গোয়েন্দাদের মতে, সইফুল্লা শুধু জঙ্গি সংগঠনের নেতা নন, পাকিস্তানে সে একজন কার্যত ‘VVIP’ চরিত্র। তার বিলাসবহুল জীবনযাপন, একাধিক দামি বিদেশি গাড়ি এবং বিশাল নিরাপত্তাবলয়—সবই তার প্রভাব ও সংযোগের পরিচায়ক। এমনকি তার নিরাপত্তা বলয় অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার থেকেও কঠোর বলেই দাবি করেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ISI-এর সক্রিয় মদতে TRF গঠন করা হয়, যার পিছনে রয়েছে লস্কর-ই-তৈবা। TRF-এর যাবতীয় অর্থ ও রসদের যোগান দেয় লস্কর, আর সেই তহবিল কার্যত পরিচালনা করে সইফুল্লা নিজেই। মাত্র দু’মাস আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কঙ্গনপুর এলাকায় সইফুল্লা গিয়েছিল। সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্নেল জ়াহিদ জ়ারিন খট্টকের আমন্ত্রণে সে এক সভায় অংশগ্রহণ করে এবং ভারতের বিরুদ্ধে চরম উগ্র ভাষণে ঝাঁঝাল বক্তব্য রাখে। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি খাইবার পাখতুনখাওয়া-তে এক সমাবেশে সইফুল্লা ঘোষণা করে: “আজ ২ ফেব্রুয়ারি। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ২০২৬ সালের মধ্যে কাশ্মীর দখলের জন্য যা যা করার দরকার, তা করব। আমাদের মুজাহিদিনরা হামলা আরও বাড়াবে।”
পহেলগাঁও হামলার পর উত্তপ্ত জম্মু-কাশ্মীর: অতিরিক্ত বিমান পরিষেবা চালু এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগোর
প্রসঙ্গত, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW, এনআইএ এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ইউনিট একাধিকবার সইফুল্লার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছে। হাফিজ সইদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কে তার অবস্থান ভারতের কাছে একটি গভীর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এই ঘটনার পরে কেন্দ্রীয় সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করেছে। পহেলগাঁও হামলায় TRF-এর জড়িত থাকার প্রমাণ এবং সইফুল্লার পরিকল্পনার খতিয়ান সামনে আসতেই কাশ্মীরজুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। অভিযানে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।