অবশেষে বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার হলেন ভারতের অন্যতম আলোচিত আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযুক্ত মেহুল চোকসি। সূত্রের খবর, ভারত সরকারের অনুরোধের ভিত্তিতে বেলজিয়াম পুলিশ তাঁকে শনিবার গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে ৬৫ বছর বয়সী এই পলাতক হিরে ব্যবসায়ী বেলজিয়ামের একটি জেলে বন্দি রয়েছেন। যদিও ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে এই গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি, তবে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (CBI) সূত্রে জানা গেছে, তাঁকে ২০১৮ এবং ২০২১ সালের মুম্বইয়ের দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে ধরা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB)-এর প্রায় ₹১৩,৫০০ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগে মেহুল চোকসি ও তাঁর ভাগনে নীরব মোদির নাম উঠে আসে। এর কিছু দিনের মধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান মেহুল। শুরু হয় তার পলায়নপর্ব—প্রথমে অ্যান্টিগা ও বারবুডা, পরে ডমিনিকা ও কিউবায় ঘুরে বেড়ান। ২০২১ সালে ডমিনিকা থেকে কিউবায় পালানোর চেষ্টা করার সময় তিনি ধরা পড়েন। সে সময় তিনি দাবি করেন, ভারত সরকার তাঁকে ‘অপহরণ’ করেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা-প্রসূত। গত মাসে বেলজিয়াম সরকার স্বীকার করে, মেহুল চোকসি তাদের দেশে অবস্থান করছেন। এরপরই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সক্রিয়ভাবে তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার শুরু করে। সূত্র অনুযায়ী, তাঁর সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী প্রীতি চোকসিও। শনিবার তাঁর গ্রেপ্তারের পর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ব্যাপারটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এখন প্রত্যাশা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই ভারতের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
আইএসএল-এ আবার ভারতসেরা মোহনবাগান: দ্বিমুকুট জয়ের ইতিহাস যুবভারতীতে
উলেখ্য, গত সপ্তাহেই মুম্বই হামলার অন্যতম মূল অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যর্পণ করে ভারত। সেই প্রেক্ষিতে মেহুল চোকসিকেও দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভারত সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ইন্টারপোল রেড কর্নার নোটিসও কার্যকর রয়েছে চোকসির বিরুদ্ধে। তবে তাঁর আইনজীবীরা শারীরিক অসুস্থতার যুক্তি তুলে ধরে বেলজিয়ামে জামিন চাইতে পারেন। সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে অর্থপাচার, দুর্নীতি ও বেআইনি সম্পদ সংক্রান্ত একাধিক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মেহুল চোকসির মতো উচ্চপ্রোফাইল অভিযুক্তকে যদি দেশে ফেরানো যায়, তাহলে তা ভারতের আইনি ও কূটনৈতিক সক্ষমতার বড় প্রমাণ হবে। একইসঙ্গে, এটি দেশের অর্থনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে সরকার কতটা কঠোর অবস্থান নিচ্ছে, তারও একটি বার্তা বহন করবে। মেহুল চোকসির গ্রেপ্তার নিঃসন্দেহে ভারত সরকারের জন্য কূটনৈতিক ও আইনি সাফল্যের এক ধাপ। তবে বাস্তবে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা কতটা সহজ হবে, তা নির্ভর করছে বেলজিয়ামের বিচারব্যবস্থা, প্রত্যর্পণ চুক্তি এবং চোকসির আইনি লড়াইয়ের উপর। এখন দেশবাসীর চোখ সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকেই।