২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে প্রকাশ্য মন্তব্য করায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আদালত অবমাননার নোটিস পাঠালেন দিল্লির আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্ত। নোটিসে অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় মানতে রাজি নন এবং তা কার্যকর করবেন না— এই বক্তব্য আদালতের অবমাননার শামিল।আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্ত তাঁর নোটিসে উল্লেখ করেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন। তিনি যদি প্রকাশ্যে ক্ষমা না চান, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হবে।”
প্রসঙ্গত, গত ৭ এপ্রিল, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরিচ্যুত প্রার্থীদের উদ্দেশে এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন: "আমি এই রায় মানতে পারছি না। কারও চাকরি কাড়ার এই অধিকার কারও নেই। আমাদের প্ল্যান— এ রেডি, বি রেডি, সি রেডি, ডি রেডি আর ই রেডি। এই কথা বলার জন্য আমাকে জেলে ভরে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু আই ডোন্ট কেয়ার। কে আটকাচ্ছে? সুপ্রিম কোর্ট? সে ক্ষেত্রে মনে রাখবেন, যা-ই বিকল্প হোক, আমরা করব।"তিনি আরও বলেন।"শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চক্রান্ত চলছে। যাঁরা শিক্ষক ছিলেন, গোল্ড মেডেলিস্ট ছিলেন, তাঁদের সবাইকে চোর বা অযোগ্য বলা হচ্ছে। এই বলার অধিকার কাকে দেওয়া হয়েছে? আমি সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছি।"আইনি নোটিসে এই উক্তিগুলোকেই আদালতের প্রতি অবজ্ঞাসূচক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বার বার স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর না করার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানিয়েছেন, রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে আইনি পথেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে রাজ্য। এরই মধ্যে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন জানিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি লেখেন:"মুখ্যমন্ত্রী যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেই মানবিক প্রয়াসের গতিপথ রোধ করতেই এই আইনি নোটিস। "রাম-বাম ভোটে পারে না, তাই কোর্টে জট পাকায়। বিচারব্যবস্থার প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আস্থা আছে। তবে কোনও রায়ে যদি বহু মানুষের ক্ষতি হয়, তাহলে তার পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো অপরাধ নয়। এর সঙ্গে আদালত অবমাননার সম্পর্ক নেই।"
১২৮ বছর পর অলিম্পিক্সে ফিরেছে ক্রিকেট
উলেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল সম্পূর্ণরূপে বাতিল করেছে, যেখানে শিক্ষক পদে নিযুক্ত প্রায় ২৬ হাজার চাকরিপ্রার্থী প্রভাবিত হয়েছেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম, যা বিচারপতিদের ভাষায় “সংবিধান লঙ্ঘনের সমান। চাকরিচ্যুত হাজার হাজার মানুষের ভবিষ্যৎ, রাজ্য সরকারের অবস্থান এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতি প্রতিক্রিয়া— সব মিলিয়ে এই বিতর্কে রাজনীতি, আইন এবং মানবিকতা— তিনটির টানাপোড়েন স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য আদতে রাজনৈতিক বার্তা, না কি আইন অমান্যের চেষ্টা— তা বিচার করবে আদালত। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, ন্যায় ও সংবেদনশীলতার মাঝপথে সমাধান খোঁজার উদ্যোগ কি যথেষ্ট?