ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও সামরিক উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন চীনের পাঁচটি বোয়িং ৭৪৭ বিমানের রহস্যময় গন্তব্য নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিমানগুলি বেইজিং থেকে উড্ডয়ন করে ইরানের দিকে রওনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিমানগুলিতে কী বহন করা হয়েছিল, কিংবা সেগুলির চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায়—তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
উলেখ্য, বিশ্ববিখ্যাত ফ্লাইট নজরদারি সংস্থা ‘Flightradar24’-এর উদ্ধৃতি দিয়ে ফক্স নিউজ জানায়, উড়ানগুলো প্রথমে উত্তর চীন থেকে কাজাখস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে, সেখান থেকে তারা ঘুরে উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান পেরিয়ে ইরানের দিকে অগ্রসর হয়। এমনকি, সেগুলিকে ইরানের আকাশসীমার মধ্যেও দেখা গেছে। যদিও রিপোর্ট অনুযায়ী কিছু বিমানের গন্তব্য হিসেবে লুক্সেমবার্গও উল্লেখ করা হয়েছিল, তবে ইউরোপের আকাশসীমায় সেগুলির কোনও চিহ্ন না মেলায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। বোয়িং ৭৪৭ হচ্ছে মালবাহী ও যাত্রীবাহী উভয় ধরনের পরিবহনে সক্ষম বিমান। এগুলি যুদ্ধবিমান নয়, তবে এদের মাধ্যমে অস্ত্র, খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী অথবা অন্য কৌশলগত উপকরণ পাঠানো একেবারে অসম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চীন হয়তো তেহেরানকে গোপনে সমর্থন জানিয়ে সরবরাহ চালাচ্ছে—যা ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। চীনের স্বার্থ ইরানে বহুদিনের। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য বেইজিং অনেকাংশেই পশ্চিম এশিয়ার উপর নির্ভরশীল। সেই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ, ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং পশ্চিমা প্রভাবের প্রতিরোধে চীন ক্রমেই ইরান, রাশিয়া ও অন্যান্য ‘অপশ্চিমা’ জোটের দিকে ঝুঁকছে।
ইরানে হামলার দ্বারপ্রান্তে আমেরিকা?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান-ইজরায়েল সংঘাত যদি কূটনৈতিকভাবে সমাধান না হয় এবং চীন-রাশিয়ার মতো শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো সরাসরি জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা সহজেই এক বিশ্বব্যাপী সংঘাতে রূপ নিতে পারে। ইতিমধ্যে রাশিয়া প্রকাশ্যে ইরানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। যদি চীনও আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে পশ্চিমা জোট, বিশেষ করে আমেরিকা ও ইজরায়েলের জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জ অনেক গুণ বেড়ে যাবে। চীনের বোয়িং ৭৪৭ বিমানের রহস্যময় গতিবিধি এখনো সরকারিভাবে নিশ্চিত না হলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট গম্ভীর। একদিকে যেমন ইরানের সঙ্গে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির জোটবদ্ধ হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে, অন্যদিকে পশ্চিমা শক্তিগুলির মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধ থামানোর কূটনৈতিক চেষ্টা না হলে, এক বৃহৎ সংঘাতের মুখে বিশ্ব পড়তে পারে—এই আশঙ্কা অমূলক নয়।