ইরান-ইজরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের জেরে ইরানের রাজধানী তেহরানে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের অবিলম্বে সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তেহরানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস। চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইজরায়েলের লাগাতার হামলায় ইরানের বিভিন্ন অংশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত তেহরান শহর বারবার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় ভারতীয় দূতাবাস এক জরুরি নির্দেশিকা জারি করে ভারতীয় নাগরিকদের অন্যত্র নিরাপদ শহরে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) জারি করা নির্দেশিকায় দূতাবাস জানায়, “যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা যেন দেরি না করে তেহরান ছেড়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ শহরে চলে যান।” এছাড়াও যাঁরা এখনো দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, তাঁদের অনতিবিলম্বে নিজের নাম, বর্তমান অবস্থান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য ভারতীয় দূতাবাসে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় নাগরিকদের সহায়তার জন্য তিনটি জরুরি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে: +98 9010144557,+98 9128109115,+98 9128109109। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ইরানে অবস্থানরত ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা। জানা গিয়েছে, ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষত মেডিক্যাল এবং প্রযুক্তি শিক্ষায় যুক্ত বহু ভারতীয় পড়ুয়া বর্তমানে ইরানে অবস্থান করছেন। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতীয় দূতাবাস ইতিমধ্যেই সিরাজ ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অনুরোধ করা হয়েছে, যেন ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে গত সোমবার থেকেই আটকে থাকা কিছু ভারতীয় নাগরিককে আর্মেনিয়ার মাধ্যমে ইরান থেকে সরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মূলত পড়ুয়াদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তেহরান ছাড়াও ইসফাহান, কেরমান এবং ইয়াজদের মতো অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলিতে সাময়িকভাবে ভারতীয়দের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র এফি ডেফরিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “ইরান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নিতে ভারত সরকারকে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করব।”
মধ্যপ্রাচ্যে আগুন: ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ কোথায় নিয়ে যাবে বিশ্বকে?
উলেখ্য, একই সঙ্গে ইরানের বিদেশ মন্ত্রকও গত ১৫ জুন একটি নির্দেশিকা জারি করে পড়ুয়াদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যদিও দূতাবাসের নির্দেশ সঠিক সময়েই এসেছে বলে অনেকে মনে করছেন, কিন্তু বাস্তবে তেহরান ছাড়ার মতো সামর্থ্য রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে ভ্রমণ ব্যয়, নিরাপদ পরিবহণ ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা অধিকাংশ আটকে পড়া নাগরিকের পক্ষেই কঠিন হয়ে পড়ছে । এই প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে দ্রুত আরও সংগঠিত ও কার্যকর উদ্ধার পরিকল্পনার দাবি উঠছে।ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই সংকট বাড়ছে সেখানে আটকে থাকা ভারতীয়দের জন্য। এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সময় নষ্ট না করে দ্রুত দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং যতটা সম্ভব নিরাপদ শহরের দিকে সরে যাওয়া। ভারত সরকার ও দূতাবাসের সমন্বিত প্রচেষ্টাই এই সংকটে আটক ভারতীয়দের জন্য আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।