মধ্যপ্রাচ্য এক অনির্দেশ্য সংঘর্ষের মুখে দাঁড়িয়ে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে ইজরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ চালু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মঞ্চে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। ইজরায়েলের এই আকস্মিক ও ভয়াবহ হামলায় ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক পরিকাঠামোর বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছেন দেশের উচ্চপর্যায়ের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী।
উলেখ্য, এমন এক উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিলেন ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য মহসিন রেজাই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, “ইজরায়েল যদি ইরানের উপর পরমাণু বোমা ব্যবহার করে, তাহলে পাকিস্তানও পাল্টা ইজরায়েলের উপর পারমাণবিক হামলা চালাবে।” তাঁর দাবি অনুযায়ী, এই বিষয়ে পাকিস্তানের তরফ থেকে ইরানকে মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে ইজরায়েল তার ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে আকাশপথে হামলা চালায়। এতে প্রাণ হারান ইরানের সেনা প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)-এর কমান্ডার হোসেন সালামি এবং জাতীয় এমার্জেন্সি কমান্ডের শীর্ষ কর্মকর্তা। এছাড়া মারা গেছেন ইরানের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আলি শামখানিসহ অন্তত ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী।
ইরানের দাবি, এই হামলায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনার আংশিক ধ্বংসের ফলে স্থানীয়ভাবে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ইরানসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলির জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে। মহসিন রেজাইয়ের বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্য তথা গোটা বিশ্বের কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রেজাই বলেন, “পাকিস্তান আমাদের আশ্বাস দিয়েছে যে, ইজরায়েল পারমাণবিক হামলা চালালে পাকিস্তান চুপ থাকবে না। পাল্টা পারমাণবিক প্রতিশোধ জানাবে।” তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই দাবি সরাসরি অস্বীকার করা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “ইরানকে আমরা সমর্থন জানিয়েছি ঠিকই, তবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে কোনওরকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। পাকিস্তান শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং কূটনৈতিক পথেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চায়।”এর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খোয়াজা আসিফ ইজরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছিলেন, “ইসলামাবাদ সবসময় তেহরানের পাশে থাকবে। মুসলিম বিশ্বকে এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”
সূর্যের ট্যান থেকে মুক্তির উপায়: প্রাকৃতিক যত্নেই ফিরে আসুক ত্বকের জৌলুস
বিশ্লেষকদের মতে, ইজরায়েলের এই পদক্ষেপ কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থির করেই তোলেনি, বরং এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়িয়ে তুলেছে। যদি সত্যিই পাকিস্তান ও ইরান একযোগে পরমাণু প্রতিশোধে নামে, তবে তার প্রভাব শুধু ইজরায়েল বা মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, বরং গোটা বিশ্বেই পড়বে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন ইতিমধ্যে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার বার্তা দিয়েছে। ইরান-ইজরায়েল দ্বন্দ্বে নতুন মোড় নেওয়া এই পর্ব কেবল আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি ও পাল্টা হুমকি আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে এক অজানা অন্ধকার গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সংযম, কূটনীতি এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানই হতে পারে একমাত্র পথ।