রথযাত্রা উৎসবের প্রাক্কালে সারা বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের রঙ। এবার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দির। সৈকত শহরের বুকে সদ্য নির্মিত এই মন্দিরে আগামী ১১ জুন, বুধবার প্রথমবারের মতো আয়োজিত হতে চলেছে স্নানযাত্রা—পুরীর রীতিনীতি অনুসরণ করেই পালিত হবে এই অনুষ্ঠান।
প্রসঙ্গত, দিঘা জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার একগুচ্ছ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময়সূচি প্রকাশ করেছে। জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে পাহাণ্ডি বিজয় উৎসব। এরপর বেলা ১১টায় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শনের স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এই অনুষ্ঠানের জন্য মন্দিরের প্রবেশদ্বারের বাঁদিকে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ মণ্ডপ, যেখানে ভক্তরা সরাসরি স্নানযাত্রা দর্শনের সুযোগ পাবেন। দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে ‘গজবেশ দর্শন’—জগন্নাথদেবের হস্তীবেশ রূপদর্শন। এই মহোৎসবের পর, ১২ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত মন্দিরে দর্শন বন্ধ থাকবে, কারণ এই সময় দেবতারা থাকবেন ‘অসুস্থ’, যা রথযাত্রার আগে এক গম্ভীর আচার। ২৬ জুন থেকে ফের মন্দিরে শুরু হবে দর্শনের সুযোগ। ২৭ জুন আয়োজিত হবে বহু প্রতীক্ষিত রথযাত্রা। ওইদিন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে রথে আরোহণ করবেন। দিঘার পর্যটন ও ধর্মীয় আবহ মিলিয়ে এবার রথযাত্রা ঘিরে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠছে এই সৈকত শহর।
এদিকে, স্নানযাত্রা উপলক্ষে কলকাতার ইসকনও তোড়জোড় শুরু করেছে। ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দিঘা মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রাধারমন দাস জানিয়েছেন, ১১ জুন, বিকেল ৩:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কলকাতার নজরুল মঞ্চে (রবীন্দ্র সরোবরের কাছে) অনুষ্ঠিত হবে জগন্নাথের স্নানযাত্রা। এরপর ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দেবতার দর্শন। ভক্তদের ভিড়, নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের কথা মাথায় রেখে দিঘা ও কলকাতা—দুই জগন্নাথ কেন্দ্রেই চলছে প্রস্তুতির শেষ পর্ব। দিঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ এবং সেখানে স্নানযাত্রার মতো ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের সূচনা এই অঞ্চলকে ধর্মীয় পর্যটনের নতুন গন্তব্য করে তুলেছে। পুরীর ধাঁচে রীতিনীতির আনুগত্য, স্থানীয় মানুষের আগ্রহ এবং ভক্তদের অংশগ্রহণ মিলিয়ে এবারের রথযাত্রা উৎসব এক নতুন ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে।