আজকের শিশুরা বেড়ে উঠছে এক ডিজিটাল দুনিয়ায়—যেখানে খেলাধুলার জায়গা দখল করেছে মোবাইল অ্যাপ, গল্পের বইয়ের বদলে ইউটিউব, আর বন্ধুদের সাথে কথা বলার মাধ্যম হয়েছে মেসেজিং অ্যাপ। কিন্তু এই ডিজিটাল অভ্যাসের মাঝেই লুকিয়ে আছে এক অদৃশ্য বিপদ—সাইবার অপরাধ।
উলেখ্য, অভিভাবকেরা কি জানেন তাদের সন্তান রাতে গোপনে কার সঙ্গে কথা বলছে? কে তাকে গেম বা ভিডিও-চ্যাট অ্যাপের লিংক দিচ্ছে? বা সামাজিক মাধ্যমে কে তাকে 'ফলো' করছে? এইসব প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে আছে শিশুদের সাইবার নিরাপত্তার মূল চাবিকাঠি। ডিজিটাল জগতের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ: বাংলাদেশ-ভারতসহ সমগ্র বিশ্বে এখন ৮-১৬ বছর বয়সের শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে দিচ্ছে প্রায় ৫ বছর বয়স থেকেই।তাদের সময় কাটে –অনলাইন গেমস (PUBG, Roblox, Free Fire),ভিডিও অ্যাপ (YouTube Kids, TikTok), সোশ্যাল মিডিয়া (Instagram, WhatsApp)
এই অ্যাপগুলোতে শিশুরা বিনোদনের পাশাপাশি নতুন মানুষের সংস্পর্শে আসে, যার মধ্যে অনেকে হতে পারে হ্যাকার, সাইবার গুমরাহকারী বা শিশু শোষণকারী। শিশুদের প্রতি প্রধান সাইবার হুমকি: সাইবার বুলিং (Cyberbullying): বন্ধু বা অপরিচিত কেউ অনলাইন মাধ্যমে কুরুচিকর বার্তা, গালাগালি বা অপমান করে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে বড় প্রভাব পড়ে। গুপ্ত তথ্য চুরি (Data Theft): মোবাইল গেম বা অ্যাপসের মাধ্যমে শিশুর ব্যক্তিগত তথ্য বা অভিভাবকের কার্ড তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। অনলাইন গ্রুমিং (Online Grooming): বয়স্ক অপরাধীরা বন্ধুত্বের ছলে শিশুকে প্রভাবিত করে এবং পরে যৌন শোষণ বা ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করে। ভুয়ো কনটেন্ট ও আসক্তি: অনেকেই ভুল তথ্য, অশ্লীল ভিডিও বা সহিংস দৃশ্য ইচ্ছাকৃতভাবে শিশুদের সামনে উপস্থাপন করে। সচেতনতা ও সুরক্ষার পথ: শিশুদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দরকার পরিবার, স্কুল এবং সমাজের সম্মিলিত ভুমিকা।
কাজ ও ব্যাক্তিগত জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখবেন কিভাবে? তার কয়েকটি পদক্ষেপ
প্রসঙ্গত, অভিভাবকদের করণীয় প্রতিদিনের অনলাইন ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করুন। Parental control সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। শিশুর সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন—সে কোথায়, কাদের সঙ্গে যুক্ত, তা জানুন। স্কুল ও শিক্ষাব্যবস্থার করণীয়: সাইবার সেফটি নিয়ে পাঠ্যক্রমে প্রশিক্ষণ দিন। শিক্ষকদের ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করুন। সরকার ও নীতিনির্ধারকের করণীয়: শিশু সুরক্ষায় বিশেষ সাইবার আইন আরও কঠোর ও কার্যকর করতে হবে। শিশুদের জন্য নিরাপদ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি ও উন্নয়ন করতে হবে। শিশুরা যেন প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারে—এটাই কাম্য। তবে প্রযুক্তির ছায়ায় তাদের নিরাপত্তা যেন অন্ধকারে না হারিয়ে যায়। স্মার্টফোনের স্ক্রিনের উল্টোপাশে থাকা অপরিচিত চোখগুলো কখনো বন্ধুবান্ধব, আবার কখনো ভয়ংকর শিকারি।তাই এখন সময়, আমরা বড়রা যেন ‘নিরাপদ ডিজিটাল শৈশব’ উপহার দিতে পারি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।