করোনা ভাইরাস এমন একটি নাম, যা গোটা বিশ্বের জীবনযাপনকে পাল্টে দিয়েছে। অনেকেই একে ‘সাধারণ ফ্লু ‘ র মতো ভেবেছিলেন শুরুতে। কিন্তু আজ, একাধিক গবেষণা ও চিকিৎসা পর্যালোচনায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, কোভিড-১৯ কেবলমাত্র ফ্লু নয়; বরং এটি মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি এবং গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (CDC), এবং ভারতের আইসিএমআর-এর (ICMR) বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে জানিয়েছেন—কোভিড-১৯-এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব, যেমন লং কোভিড, নিউরোলজিকাল সমস্যা, হৃদরোগ, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি, সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার তুলনায় অনেক বেশি উদ্বেগজনক। অনেক রোগী, যারা প্রাথমিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তারা মাসের পর মাস ভুগছেন ক্লান্তি, একাগ্রতা হ্রাস, ঘুমের সমস্যা, পেশীর ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা পরিভাষায় ‘লং কোভিড’ বলা হচ্ছে। বিশেষ করে হৃদরোগী, ডায়াবেটিক বা শ্বাসকষ্টে ভোগা ব্যক্তিরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ও ভারতের বহু রোগীর উপর করা একাধিক গবেষণায় জানা গেছে, দ্বিতীয় তরঙ্গের পরে কোভিড রোগীদের অনেকেই কিডনি জটিলতা, হাইপারটেনশন ও নিউরোসাইকিয়াট্রিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এমনকি, শিশুদের মধ্যেও মাল্টি-সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম দেখা গেছে। করোনা কোনো সাধারণ ফ্লু নয়। এটি একটি ঘাতক ভাইরাস, যা দেহে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির ছাপ ফেলতে পারে। তাই মাস্ক পরা, ভ্যাকসিন নেওয়া, স্যানিটাইজেশন এবং সচেতনতা বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই। ভুলে গেলে চলবে না—"সতর্কতাই এখন একমাত্র প্রতিরক্ষা।" ২০২৫ সালের জুন মাসে ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন ঢেউটি আগের তুলনায় অনেকটাই মৃদু এবং আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতি
ভারতে সক্রিয় কোভিড-১৯ কেসের সংখ্যা ৫,৩৬৪-এ পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধির মূল কারণ NB.1.8.1 নামক একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট, যা ওমিক্রনের একটি উপ-ভ্যারিয়েন্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি সাধারণত মৃদু উপসর্গ সৃষ্টি করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না । বর্তমানে রাজ্যে সক্রিয় কেসের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন, বিশেষ করে বয়স্ক ও দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য । বর্তমান ঢেউয়ের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো গলার স্বর ভেঙে যাওয়া বা কর্কশতা। আগের মতো স্বাদ ও গন্ধ হারানোর পরিবর্তে, এখন অনেক রোগী শুকনো কাশি, গলা ব্যথা এবং কর্কশ গলার স্বর নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসছেন ।
নারীকেন্দ্রিক সিনেমা: বক্স অফিস এখন নারীদের দখলে
প্রতিরোধ ও সতর্কতা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিম্নলিখিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন: মাস্ক পরিধান: বিশেষ করে জনবহুল বা বদ্ধ স্থানে। হাত ধোয়া: নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে। ভিড় এড়ানো: সম্ভব হলে জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। টিকা গ্রহণ: যারা এখনও টিকা নেননি বা বুস্টার ডোজ প্রয়োজন, তারা তা গ্রহণ করুন। উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা: জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড পরীক্ষা করুন। বিশেষ করে বয়স্ক, গর্ভবতী নারী এবং যাদের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কেন্দ্রীয় সরকার হাসপাতালগুলিতে প্রস্তুতি যাচাইয়ের জন্য মক ড্রিল পরিচালনা করছে এবং রাজ্যগুলিকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন, ওষুধ এবং আইসোলেশন সুবিধা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে । 'আরোগ্য সেতু' অ্যাপ্লিকেশনটি এখনও সক্রিয় রয়েছে, যা নাগরিকদের সংক্রমণের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করতে সাহায্য করে। এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্লুটুথ এবং জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংক্রমিত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে । বর্তমান কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই মৃদু, তবে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, টিকা গ্রহণ এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করানো আমাদের সকলের দায়িত্ব। সচেতনতা এবং সতর্কতার মাধ্যমে আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারি।