আন্তর্জাতিক ক্রীড়াজগতে এশিয়ার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর হল — এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৭৩ সালে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় সূচনা হওয়া এই প্রতিযোগিতা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শুধু প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র নয়, বরং বহু খেলোয়াড়ের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক বড় মঞ্চে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবারই এই আসর বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে — কখনো জাপান, কখনো কোরিয়া আবার কখনো কাতারে । ২০১৭ সালে এই চ্যাম্পিয়নশিপের আসর প্রথমবারের মতো ভারতের ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে ভারতীয় অ্যাথলেটরা ২৯টি পদক জিতে ইতিহাস গড়ে। সেখান থেকেই ভারতের অ্যাথলেটিক্সে উত্থান শুরু। হিমা দাস, নীরজ চোপড়া, তেজিন্দর পাল তূর প্রমুখ খেলোয়াড়দের মাধ্যমে ভারত এশিয়ার মহাদেশে এক অন্যতম শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০২৫ সালের ২৬তম এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। দক্ষিণ কোরিয়ার গুমি শহরে ২৭ থেকে ৩১ মে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় ভারতীয় অ্যাথলেটরা মোট ২৪টি পদক জয় করেন, এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপস ২০২৫-এ ভারতীয় অ্যাথলেটরা এক ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছেন। ৮টি স্বর্ণ, ১০টি রৌপ্য এবং ৬টি ব্রোঞ্জসহ মোট ২৪টি পদক জিতে ভারত দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।
গুলবীর সিংহ পুরুষদের ৫,০০০ এবং ১০,০০০ মিটার দৌড়ে স্বর্ণপদক জয় করেন, যা ভারতের দীর্ঘদূরত্ব দৌড়ে নতুন দিগন্তের সূচনা করে। পূজা সিংহ, মাত্র ১৮ বছর বয়সে, মহিলাদের উচ্চ লাফে ১.৮৯ মিটার লাফিয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন, যা তাকে ভারতের দ্বিতীয় মহিলা উচ্চ লাফার হিসেবে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জয়ের গৌরব এনে দেয়। জ্যোতি ইয়ারাজি নারীদের ১০০ মিটার হার্ডলসে স্বর্ণপদক জয় করেন এবং নতুন চ্যাম্পিয়নশিপ রেকর্ড স্থাপন করেন, যা তার ধারাবাহিক সাফল্যের প্রমাণ।পারুল চৌধুরী নারীদের ৩,০০০ মিটার স্টিপলচেজে রৌপ্যপদক জয় করেন এবং নতুন জাতীয় রেকর্ড স্থাপন করেন।কুঞ্জা রাজিতা মহিলাদের ৪x৪০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণপদক জয় করেন, যা তার ক্যারিয়ারের একটি বড় সাফল্য।
৬২ মিলিয়ন বছরের পুরনো ফসিল: স্তন্যপায়ীদের আবির্ভাবের নতুন সূত্র
তুলনামূলকভাবে, ২০২৩ সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় অ্যাথলেটরা মোট ২৭টি পদক জয় করে, যার মধ্যে ছিল ৬টি স্বর্ণ, ১২টি রৌপ্য এবং ৯টি ব্রোঞ্জ। সেই সময়ে ভারত পদক তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে। অন্যদিকে, ২০১৯ সালে দোহায় অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় ভারত ১৬টি পদক জয় করে, যার মধ্যে ছিল ২টি স্বর্ণ, ৭টি রৌপ্য এবং ৭টি ব্রোঞ্জ। এই তুলনামূলক আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, ভারতের অ্যাথলেটিক্স পারফরম্যান্স ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে। এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ শুধুমাত্র একটি খেলার আসর নয়, এটি এশিয়ার একতার প্রতীক। প্রতিযোগিতা যত এগোয়, ততই তৈরি হয় নতুন রেকর্ড, নতুন ইতিহাস, নতুন পথ চলা ।