আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ) সম্প্রতি পাকিস্তানকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ মঞ্জুর করেছে, যা ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকারও বেশি। আইএমএফের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে তৈরি হয়েছে কূটনৈতিক বিতর্ক এবং প্রশ্ন উঠেছে ঋণের সময় ও উদ্দেশ্য নিয়ে, বিশেষত ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে।
উলেখ্য, আইএমএফের যোগাযোগ বিভাগের ডিরেক্টর জুলি কোজ়্যাক এক সাংবাদিক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পাকিস্তান ঋণের জন্য নির্ধারিত সমস্ত লক্ষ্য পূরণ করেছে এবং বেশ কিছু কাঠামোগত সংস্কারেও অগ্রগতি দেখিয়েছে। ফলে তাদের বোর্ডের কাছে ঋণ মঞ্জুরে কোনো বাধা ছিল না। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের পরিস্থিতির প্রথম পর্যালোচনা করা হয়েছিল ২০২৫ সালের প্রথম ভাগের জন্য। সেই অনুযায়ী ২৫ মার্চ পাকিস্তান সরকার এবং আইএমএফ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয় এবং তা ৯ মে সম্পূর্ণ হয়। এরপরই ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় করা হয়।”ঋণের মোট পরিমাণ ২১০ কোটি ডলার, যা ইএফএফ (Extended Fund Facility) প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে দেওয়া হচ্ছে। তবে পাকিস্তান একসঙ্গে পুরো অর্থ পাচ্ছে না; বরং ধাপে ধাপে কিস্তি আকারে ঋণ ছাড় করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তে কড়া আপত্তি জানিয়েছে ভারত। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সম্প্রতি গুজরাতের ভুজে এক বিবৃতিতে বলেন, “আইএমএফ পাকিস্তানকে যে টাকা দিয়েছে, তার অনেকটাই সন্ত্রাসবাদে ব্যবহৃত হবে। ভারত চায়, আইএমএফ এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক।”ভারতের এই উদ্বেগের মূল প্রেক্ষাপট পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা। ২২ এপ্রিলের ওই ঘটনায় প্রাণ হারান ২৬ জন। ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও হামলা চালায় এবং দু’দেশের মধ্যে টানা চার দিন ধরে সংঘর্ষ চলে। শেষমেশ ১০ মে উভয় দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। বিবৃতিতে আইএমএফ পহেলগাঁও হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। তবে আইএমএফ স্পষ্ট করেছে, তাদের ঋণ মঞ্জুরের প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ আর্থিক এবং প্রশাসনিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে।
গাজ়ায় ফের ইজ়রায়েলের বোমাবর্ষণে মৃত্যু বেড়ে ৮৫
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএমএফ সাধারণত দেশের আর্থিক নীতির স্থায়িত্ব, বাজেট ঘাটতি কমানো, রাজস্ব আদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং আর্থিক স্বচ্ছতার উপর গুরুত্ব দেয়। পাকিস্তান এসব ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক কিছু সংস্কার করায় তারা এই ঋণ অনুমোদন পেয়েছে। তবে ভারত এবং অন্যান্য সমালোচকরা বলছেন, আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির উচিত শুধুমাত্র আর্থিক নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নেওয়া। কারণ, এই তহবিল যদি সন্ত্রাসবাদের মতো কার্যকলাপে ব্যবহৃত হয়, তবে তা শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি হয়ে উঠতে পারে। আইএমএফের এই সিদ্ধান্ত আগামী দিনে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। তবে এটুকু নিশ্চিত, পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ ছাড়িয়ে এখন কূটনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে।