বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড়সড় আলোড়ন তুলেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুসের পদত্যাগের গুঞ্জন। চাপের মুখে তিনি পদত্যাগের কথা বিবেচনা করছেন বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। যদিও বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিক নয়, তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যেই এই ইঙ্গিত নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম। সাক্ষাতের পর বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে নাহিদ জানান, ইউনুস তাঁকে বলেছেন, "কাজ না করতে পারলে থেকে কী লাভ!" এই উক্তিতেই উঠে এসেছে তাঁর হতাশা ও অনিশ্চয়তার চিত্র। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে ইউনুসের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ তৈরি হয়েছে। বিশেষত, বিএনপি ও সেনাবাহিনী তাঁর নেতৃত্বে আর আস্থা রাখতে চাইছে না। দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ায় সেনাপ্রধান বুধবার সরাসরি হুমকি দিয়েছেন—যদি দ্রুত নির্বাচন ঘোষণা না করা হয়, তাহলে ক্ষমতা নিজেরাই গ্রহণ করবেন। এই হুমকির পরপরই ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে ইউনুসের সম্ভাব্য পদত্যাগের খবর। বৃহস্পতিবার ঢাকায় আহ্বান করা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ইউনুস প্রথমবারের মতো নিজের পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। বৈঠকে ইউনুস তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “ঢাকায় প্রতিদিন রাস্তায় আন্দোলন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব, এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে বারবার অসহযোগিতা—এসবের কারণে কার্যকর সংস্কার অসম্ভব হয়ে উঠেছে।”এছাড়াও, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যালট ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটলেও পুলিশ বা প্রশাসন তা প্রতিরোধে কতটা সক্ষম হবে, তা নিয়েও আমি নিশ্চিত নই।”
উলেখ্য, এতসব ঘটনার পরও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, ইউনুসের পদত্যাগের এই বার্তা আদতে একটি কৌশল। একদিকে তাঁর প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে আড়াল করা, অন্যদিকে নানা মহলের অসহযোগিতার দোহাই দিয়ে সহানুভূতি আদায় করার চেষ্টা। উদ্দেশ্য, আরও কিছুদিন পদে থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। তবে, নাহিদ ইসলামের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, ইউনুস আদতে চরম হতাশ। যাঁকে সংস্কারের প্রতীক হিসেবে সামনে আনা হয়েছিল, তিনিই আজ প্রশ্ন তুলছেন সেই সংস্কার-প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সেনা হস্তক্ষেপের হুমকি ও একে অপরকে দোষারোপের এই পরিস্থিতিতে মহম্মদ ইউনুসের পদত্যাগ কেবল একটি ব্যক্তি-নির্ভর সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি হতে পারে একটি বড় রাজনৈতিক পালাবদলের সূচনাও। এখন দেখার, এই সংকটের মধ্যে থেকে দেশ কোন পথে এগোয়—সংলাপ ও সমঝোতার পথে, না কি নতুন করে সংঘাত ও অনিশ্চয়তার দিকে।