পাকিস্তানে ফের অজ্ঞাত হামলার শিকার লস্কর ই তইবার অন্যতম শীর্ষ নেতা আমির হামজা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে লাহোরের একটি সেনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সূত্রের খবর, নিজের বাড়িতেই আক্রান্ত হন এই আন্তর্জাতিক জঙ্গি। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হিটলিস্টে থাকা এই কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী কীভাবে আহত হলেন, তা নিয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে চলা রহস্যজনক সন্ত্রাসী নিধন অভিযান নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।
উলেখ্য, আমির হামজা শুধু লস্কর ই তইবার শীর্ষ নেতা নন, তিনি সংগঠনটির মুখপত্র ও প্রচারপত্রের সম্পাদকের ভূমিকায় ছিলেন দীর্ঘদিন। পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালা শহরের বাসিন্দা এই জঙ্গি ২০১২ সালে আমেরিকার পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। হামজার সঙ্গে হাফিজ সইদ এবং আবদুল রহমান মক্কির মতো কুখ্যাত জঙ্গিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলেও জানা গেছে। সাম্প্রতিক খবরে উঠে এসেছে, কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হয় লস্করের আরেক শীর্ষ জঙ্গি আবু সইফুল্লা। ঠিক তার পরপরই আমির হামজার আহত হওয়ার ঘটনায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। একের পর এক লস্কর নেতাদের উপর এই ধরণের হামলা আদৌ কি পাকিস্তানের ভিতরে কোনও গোপন অপারেশন? নাকি আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার মদতে পরিকল্পিত অভিযান? উঠছে একাধিক প্রশ্ন। ২০০০ সালের গোড়ায় ভারতে সক্রিয় ছিল আমির হামজা। ২০০৫ সালের বেঙ্গালুরু হামলায় আবু সইফুল্লার অন্যতম সহযোগী হিসেবে উঠে আসে তার নাম। ২০১০ পর্যন্ত লস্করের প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তার হাতে। ২০১৮ সালে লস্কর এবং জামাত-উদ-দায়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর হাফিজ সইদের নির্দেশে ‘জইশ-ই-মানকাফা’ নামে নতুন একটি সংগঠন তৈরি করে হামজা। প্রথমে অনেকে ধারণা করেছিলেন, লস্করের অভ্যন্তরে ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু পরে জানা যায়, এটি ছিল পাকিস্তানের আর এক চাতুর্যপূর্ণ চাল – আন্তর্জাতিক নজর এড়ানোর উদ্দেশ্যে নতুন ব্যানারে পুরোনো কার্যকলাপ চালানোর প্রয়াস।
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তানের মাটিতে একের পর এক সন্ত্রাসী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পহেলগাঁও হামলার পাল্টা জবাবে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় বাহিনী। কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোনও সন্ত্রাসবাদবিরোধী পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। বরং লস্করের জঙ্গিদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পাকিস্তানি সেনা আধিকারিকদের উপস্থিতির ছবি প্রকাশ্যে আসায় আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইসলামাবাদ। এই প্রেক্ষাপটে আমির হামজার উপর হামলা নিছকই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, না কি পরিকল্পিত জঙ্গি-সাফাই অভিযান—তা সময়ই বলবে। তবে একের পর এক জঙ্গি নেতার মৃত্যু বা আহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের মাটিতে ভয়ানক কিছু ঘটে চলেছে, এতটুকু বলা যেতেই পারে।