বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের স্থলবাণিজ্যে নয়া নিষেধাজ্ঞা জারি করল কেন্দ্র সরকার। শনিবার (১৮ মে) জারি হওয়া কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, একাধিক বাংলাদেশি পণ্য আর স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। তার জেরে ইতিমধ্যেই প্রভাব পড়েছে ভারতের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর পেট্রাপোলে। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে আপাতত স্বাভাবিক রয়েছে ঘোজাডাঙা সীমান্তে বাণিজ্যিক পরিবহন।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আসা তৈরি পোশাক, সুতির থান, প্যাকেটজাত পানীয়, কাঠের আসবাবপত্র সহ একাধিক পণ্য ভারতের নির্দিষ্ট কিছু স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে না। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল, চ্যাংড়াবান্ধা এবং ফুলবাড়ি ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতের অসম, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মেঘালয়ের সীমান্তবন্দরগুলি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই ধরনের সামগ্রী শুধুমাত্র কলকাতা ও মুম্বই বন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। ফলে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করা পণ্যের উপর বড়সড় ধাক্কা এসেছে। পেট্রাপোল বন্দরের ব্যবসায়ীদের মতে, এখানে যে পরিমাণ পণ্য প্রতিদিন আমদানি হয়, তার প্রায় ৪০ শতাংশই বাংলাদেশি তৈরি পোশাক ও সুতির সামগ্রী। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “পেট্রাপোল সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। এখান দিয়ে বস্ত্র আমদারি-রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় প্রচুর ব্যবসায়ী এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া শ্রমিকদের বিরাট ক্ষতি হবে। তবে বাংলাদেশেরও বোঝা উচিত, ওদের স্বাধীনতায় আমাদের কতটা অবদান আছে, তা ওরা ভুলে গিয়েছে। তাই ওদের শিক্ষা দেওয়াটা দরকার।”পেট্রাপোলের সঙ্গে বিপরীতে ঘোজাডাঙা সীমান্তে রোববার কোনো বড় প্রভাব দেখা যায়নি। সীমান্ত পেরিয়ে দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক যাওয়া-আসা স্বাভাবিক গতিতেই চলেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল থেকেই প্রায় ১০০টি ট্রাক যাতায়াত করেছে এই সীমান্ত দিয়ে। ঘোজাডাঙ্গা কিলিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জিব মণ্ডল জানান, “সবার আগে আমার দেশ। সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই চূড়ান্ত। তবে এ পথে ব্যবসা বন্ধ হলে দিনমজুর ও খালাসিরা সমস্যায় পড়বেন।”
ঘরশত্রু বিভীষণ! ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার চরবৃত্তির জালে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য
উলেখ্য, যদিও এখনই পুরোপুরি সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়নি, তবুও আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে। বিশেষ করে গাড়ির চালক, খালাসি, লজিস্টিক কর্মী এবং ছোট ব্যবসায়ীরা দোলাচলের মধ্যে রয়েছেন। তাঁদের মতে, যদি ভবিষ্যতে ঘোজাডাঙা বা অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়েও আমদানি বন্ধ হয়ে যায়, তবে তা বড় আকারে প্রভাব ফেলবে স্থানীয় অর্থনীতিতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকেও বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, অন্যদিকে সীমান্ত অঞ্চলের ব্যবসা ও শ্রমজীবী মানুষের জীবন—এই দুইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে স্থলবাণিজ্য এখন এক অনিশ্চয়তার মুখে। নজর রাখতে হবে, ভবিষ্যতে এই নির্দেশিকা কার্যকরে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয় কি না, এবং তা কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।