দেশজুড়ে তোলপাড় ফেলেছে জনপ্রিয় ইউটিউব ট্রাভেল ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রার বিরুদ্ধে চরবৃত্তির অভিযোগ। একসময় যাঁর ভ্রমণ ভিডিও দেখে মুগ্ধ হতেন লক্ষ লক্ষ দর্শক, সেই জ্যোতির বিরুদ্ধে এখন পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ISI-কে গোপন তথ্য পাচারের গুরুতর অভিযোগ। হরিয়ানা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে “অপারেশন সিঁদুর” অভিযানের আওতায়। আর সেই সঙ্গেই একে একে বেরিয়ে আসছে চমকপ্রদ তথ্য, যেগুলো শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নয়, সাধারণ নাগরিকদেরও কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
তদন্তকারী সংস্থার দাবি, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জ্যোতির কাশ্মীরের পহেলগাঁও সফর ছিল মোটেও নিছক ভ্রমণ নয়। আর ঠিক তিন মাস পরেই সেই সবুজ উপত্যকায় ঘটে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। বুলেটবৃষ্টিতে প্রাণ হারান ২৬ জন নিরীহ মানুষ। গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন, পহেলগাঁও সফরের সময় তিনি নানা কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে তা ISI-র হাতে তুলে দেন। সূত্রের খবর, জ্যোতির সঙ্গে সরাসরি যোগসূত্র ছিল দিল্লিতে কর্মরত পাক হাই কমিশনের এক আধিকারিক দানিশের। ১৩ মে দানিশকে ভারত সরকার চরবৃত্তির অভিযোগে বহিষ্কার করেছে। জানা গেছে, তিনিই জ্যোতিকে চরবৃত্তির প্রশিক্ষণ দেন। গোয়েন্দারা আরও দাবি করেছেন, জ্যোতি অন্তত তিনবার পাকিস্তান সফর করেছেন এবং সেখানে ISI-র একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই কেলেঙ্কারিতে শুধু জ্যোতিই নন, ধরা পড়েছেন আরও অনেকে। হরিয়ানারই এক কলেজ পড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জ্যোতির সঙ্গে মিলে তথ্য পাচারের অভিযোগে। এমনকি ওড়িশার পুরী থেকে আরও এক জনপ্রিয় মহিলা ইউটিউবারের নাম উঠে এসেছে তদন্তে, যিনি নাকি গত বছরের সেপ্টেম্বরে জ্যোতির জগন্নাথ ও কোনারক মন্দির সফরের তদারকি করেছিলেন। জ্যোতির ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৩.৭৭ লক্ষেরও বেশি। ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার ১.৩৩ লক্ষের কাছাকাছি। এই জনপ্রিয়তাকেই তিনি হাতিয়ার করেছিলেন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য। গোয়েন্দাদের মতে, তাঁর এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল তথ্য সংগ্রহ এবং তা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া। এই তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গিরা একাধিক নাশকতার ছক কষেছিল বলেই ধারণা।
‘অপারেশন সিঁদুর’: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের বার্তা নিয়ে ৩২ দেশে যাচ্ছে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল
উলেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন,“এটা কি শুধুই কাকতালীয় যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে জ্যোতি পহেলগাঁও এসেছিলেন? নাকি এর পিছনে অন্য কোনও ব্যাপার রয়েছে? তাঁর এই মন্তব্যেই স্পষ্ট, গোটা ঘটনায় গভীর চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন নিরাপত্তা বিশারদরাও। সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা, ভ্রমণের ছদ্মবেশ এবং আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার— এই তিনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল জ্যোতি মালহোত্রার চরবৃত্তির নেটওয়ার্ক। একদিকে যেখানে সাধারণ মানুষ তাঁর ভিডিও দেখে বিনোদিত হতেন, অন্যদিকে সেই ভিডিওর আড়ালে চলছিল রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত।এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ঘরের শত্রু বিভীষণের মতো দেশদ্রোহী শক্তি আজ কতটা সুপরিকল্পিত এবং ছদ্মবেশী। সজাগ না হলে ভবিষ্যতে এর চেয়েও বড় বিপদের সম্মুখীন হতে পারে দেশ।