চলছিল দীর্ঘ জল্পনা। জানুয়ারিতেই তৃণমূল সভায় জন বার্লার উপস্থিতি রাজনৈতিক মহলে সন্দেহের বীজ বুনেছিল। শেষমেশ সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন উত্তরবঙ্গের পরিচিত রাজনৈতিক মুখ, প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা।
উলেখ্য, তাঁর যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের শীর্ষনেতা সুব্রত বক্সী এবং অরূপ বিশ্বাস। সুব্রত বক্সী এই যোগদানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করে জানান, “জন বার্লার মতো জনপ্রতিনিধি দলে আসায় চা-বাগানে সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে। দিদি তাঁকে যেমন রাজ্য কমিটিতে দায়িত্ব দেবেন, তেমনই চা শ্রমিকদের উন্নয়নের কাজেও তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রাখবেন।”তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিয়ে প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বার্লা। বলেন, “আমাকে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য দিদিকে ধন্যবাদ জানাই।”এদিন বার্লা স্পষ্ট করেন, তাঁর এই সিদ্ধান্ত মোটেই আচমকা নয়। তাঁর কথায়, “ছয়-সাত মাস আগে থেকেই কথাবার্তা চলছিল। দিদিও মাঝে ফোন করেছিলেন। কাজের সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন।”তাঁর অভিযোগ, বিজেপিতে থাকার সময় চা-বাগানের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে গিয়েও বারবার বাধার মুখে পড়েছেন তিনি। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা এসেছে দলীয় নেতৃত্ব থেকেই।তিনি বলেন, “আমি চা-বাগানে হাসপাতাল তৈরি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিজের দলের লোকেরাই বাধা দিয়েছে। এমন একটা দলের সঙ্গে কেন কাজ করব, যেখানে উন্নয়নের উদ্যোগে বাধা আসে? শুভেন্দু অধিকারীর নাম করে বার্লা জানান, “আমি এমন নেতার সঙ্গে কাজ করতে চাই না, যিনি মানুষকে ভাগ করে নিজে মুখ্যমন্ত্রী হতে চান।”জন বার্লার কণ্ঠে ছিল স্পষ্ট ক্ষোভ বিজেপির প্রতি। বলেন, “২০১৪ সাল থেকে চা-বাগানের মানুষ বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কী পেয়েছেন? আমি যখন সাংসদ হলাম, তখন ভেবেছিলাম কাজ করব, কিন্তু বাধা পেয়েছি সর্বত্র।”
রাষ্ট্রপতির ১৪৩ ধারা প্রয়োগ: বিচারবিভাগ ও প্রশাসনের সম্পর্কের নতুন মোড়
অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। জানান, “চা শ্রমিকদের নিয়ে দিদির সঙ্গে কথা বলব। আমি কাজ করতে চাই।”জন বার্লার তৃণমূলে যোগদান যে শুধু ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, তা স্পষ্ট করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। উত্তরবঙ্গের চা-বাগান অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বার্লার প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। ২০১৯ সালে বিজেপির হয়ে বিপুল ভোটে জেতা এই নেতা যদি এখন ঘাসফুল শিবিরে সক্রি হন, তাহলে আসন্ন নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে বিজেপির জন্য এটি বড় ধাক্কা হতে পারে।এই পদক্ষেপ বিজেপির ভাঙনের ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না, এখন সেটাই দেখার। তবে আপাতত জন বার্লা তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন—যেখানে কাজের সুযোগ নেই, সেখানে তিনি থাকতে নারাজ। আর এখন তিনি চা-বাগানের মানুষের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে।