কাশ্মীর উপত্যকায় ফের রক্তাক্ত পরিণতি। সন্ত্রাসবাদীদের দমনে ভারতীয় সেনার কড়া প্রত্যাঘাতের পর পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নিয়ন্ত্রণরেখা (LoC)। বুধবার সকাল থেকে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১২ জন নিরীহ কাশ্মীরি নাগরিক, যাঁদের মধ্যে রয়েছে দুই শিশু। আহত হয়েছেন আরও ৩০ জনের বেশি। সীমান্তবর্তী বহু এলাকা, বিশেষ করে পুঞ্চ জেলায়, ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে পাঁচটি জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার গভীর রাতে ভারতীয় সেনা 'অপারেশন সিঁদুর' নামে একটি সুনির্দিষ্ট সামরিক অভিযান চালায়। এই অভিযানে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) থাকা অন্তত ৯টি জঙ্গিঘাঁটি নিশানায় নেয় ভারত। একাধিক 'প্রিসিশন স্ট্রাইক'-এ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বাহাওয়ালপুরের জইশ-ই-মহম্মদ, মুরাক্কায় লস্কর-ই-তৈবা এবং হিজবুল মুজাহিদিন-এর সদর দপ্তর। বিদেশসচিব ও সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্তা এক যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে জানান, যেসব জায়গা থেকে ভারতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পরিচালিত হচ্ছিল, সেই জায়গাগুলিকেই নিশানা করা হয়। গোটা অপারেশনের তত্ত্বাবধানে ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাকিস্তানের এই জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের পর পরই শুরু হয় পাকিস্তানের দিক থেকে গোলাবর্ষণ। বুধবার সকালে সীমান্তে থাকা নিরীহ মানুষদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে পাক সেনা। প্রাণ বাঁচাতে বহু মানুষ বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন। বেসামরিক এলাকায় পাক হামলার ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।
অপারেশন সিঁদুর: পহেলগাঁও হামলার জবাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার পাল্টা হামলা
উলেখ্য, কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে এদিন সকালে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তাঁর মন্তব্য, “আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই শান্তি ফিরুক। কিন্তু তার জন্য প্রতিবেশীকেও আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। তাহলে আমাদের তরফেও কোনও প্রতিক্রিয়া থাকবে না।” 'অপারেশন সিঁদুর'-এর মাধ্যমে ভারত জঙ্গিবাদ রুখতে স্পষ্ট বার্তা দিলেও এর পরিপ্রেক্ষিতে নিরীহ নাগরিকদের প্রাণহানি আরও একবার তুলে ধরল, সীমান্ত সংঘাতের মূল খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই। একদিকে কূটনৈতিক চাপ, অন্যদিকে সেনা অভিযান—এই দ্বিমুখী কৌশল কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার।