পহেলগাঁও হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের পারদ চড়ছে দ্রুত। একাধিক গোয়েন্দা সূত্র, কূটনৈতিক বার্তা এবং সামরিক তৎপরতা মিলিয়ে যে আবহ তৈরি হয়েছে, তাতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চূড়ান্ত সংঘর্ষের শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে দেশের একাধিক রাজ্যকে নিরাপত্তা মহড়ার নির্দেশ দেওয়া যুদ্ধজল্পনাকে আরও উস্কে দিল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
সোমবারের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী ৭ মে (বুধবার) দেশের বিভিন্ন রাজ্যে 'সিকিউরিটি ড্রিল' বা নিরাপত্তার নকল মহড়া আয়োজিত হবে। এই মহড়ার সময় বাজানো হবে বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন, চলবে ব্ল্যাকআউট অনুশীলন। সাধারণ নাগরিক, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষা, উদ্ধারকার্য ও নিরাপদ আশ্রয়গ্রহণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কেন্দ্রের তরফে স্পষ্ট বার্তা— যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এর আগে রবিবার পাঞ্জাবের ফিরোজপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সেনাবাহিনীর তরফে ব্ল্যাকআউট ড্রিল করা হয়। রাতের আঁধারে পুরো শহরে নেমে আসে নিস্তব্ধতা, আলো নিভিয়ে সামরিক বাহিনী অনুশীলন চালায় সম্ভাব্য বিমান হামলার পরিকাঠামো নিয়ে। কেন্দ্রের সোমবারের নির্দেশ সেই প্রস্তুতিরই ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।
মেট গালায় ইতিহাস গড়লেন শাহরুখ খান: সব্যসাচীর সৃষ্ট পোশাকে বিশ্ব মঞ্চে ‘কিং’ লুক
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ একরকম ‘সিগন্যালিং’ বা বার্তা— যা শুধু দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে যে ধরনের সিভিল ডিফেন্স মহড়ার আয়োজন হয়েছিল, এবারের উদ্যোগ সেই ঘটনার সঙ্গে তুলনীয়। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই ভারত সরকার কড়া অবস্থান নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বারবার সাফ জানিয়েছেন— "উপযুক্ত সময়েই উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।" এই প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা মহড়ার নির্দেশ একপ্রকার 'মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি' বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ বাড়ছে। শান্তিপূর্ণ আলোচনার বদলে যুদ্ধের সম্ভাবনা ঘিরে কূটনৈতিক তৎপরতা তীব্র হচ্ছে। একইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরেও রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়াচ্ছে— যুদ্ধ কি অবশ্যম্ভাবী, না কি এ কেবল চাপে রাখার কৌশল? সোমবারের কেন্দ্রীয় নির্দেশ এবং তার কার্যকর বাস্তবায়ন শুধু একটি সাধারণ ড্রিল নয়— এটি ভবিষ্যতের প্রস্তুতির বার্তা। যুদ্ধ হোক বা না হোক, ভারতের এই পদক্ষেপ স্পষ্ট করছে যে দেশ আর কোনও অনিশ্চয়তার জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে রাজি নয়।