বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কিছু জুটি অমর হয়ে গেছে, তাদের মধ্যে উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। বাংলা চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম প্রতীক হয়ে ওঠে তাদের রোমান্টিক জুটি। তবে, এমন একসময় ছিল যখন ঋত্বিক ঘটক, যিনি বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান পরিচালক, তাঁর চলচ্চিত্রে এই অদ্বিতীয় জুটিকে অন্তর্ভুক্ত করেননি। কিন্তু কেন ঋত্বিক ঘটক, যিনি মহাকাব্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য পরিচিত, কখনই উত্তম কুমার সাথে কাজ করেননি? এই প্রশ্নের উত্তর গভীরে, কিছু মানুষের সম্পর্কের তলদেশে।
উলেখ্য, ঋত্বিক ঘটক কখনও সুচিত্রাকে মহানায়িকা হিসেবে দেখতেন না। যদিও সুচিত্রা সেন ছিলেন বাংলা সিনেমার এক অতি জনপ্রিয় অভিনেত্রী, ঋত্বিকের কাছে তিনি ছিলেন অন্য ধরনের মানুষ। তিনি সুচিত্রাকে দেবী মা হিসাবে দেখতেন। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে, যখন ঋত্বিকের জীবন শেষপ্রান্তে, তখন তিনি এক অদ্ভুত ঘটনাটি সুচিত্রার সাথে ভাগ করে নিয়েছিলেন। ঋত্বিক তখন হাসপাতালে শয্যাশায়ী। তার শরীর দুর্বল হয়ে গিয়েছিল অতি মদ্যপান এবং শারীরিক অবস্থার কারণে। এই সময়েই সুচিত্রা সেন নিয়মিতভাবে ঋত্বিককে হাসপাতালে দেখতে আসতেন। তাঁর ব্যস্ততা সত্ত্বেও, সুচিত্রা প্রতিদিন ফল নিয়ে হাসপাতালে যেতেন এবং ঋত্বিকের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতেন। একদিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা ঋত্বিক গলার জোর কমে আসায় সুচিত্রাকে ডাকলেন। তিনি বললেন, "তুমি যেভাবে আমার কাছে এসেছো, তা কোনও মহানায়িকা কখনও করবে না। তুমি আমার কাছে দেবী মায়ের মতো।" ঋত্বিকের এই মন্তব্য শুনে সুচিত্রা প্রথমে চমকে গিয়েছিলেন। তবে, ঋত্বিক থামেননি, তিনি আরও বলেছিলেন, "তোমার মধ্যে আমি সেই মানবিকতা অনুভব করি যা অন্য কেউ অনুভব করতে পারে না।"
খুনের মামলায় জামিন পেলেন সুশীল কুমার
প্রসঙ্গত, এ ঘটনার পর, সুচিত্রার অনুরাগীরা তাঁকে এক নতুন রূপে আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁরা দেখেছিলেন, সুচিত্রা সেন শুধুমাত্র চলচ্চিত্রের মহানায়িকা নন, বরং একজন সহানুভূতিশীল, সত্যিকার মানুষ, যিনি নিজের চরিত্রে বিশাল গুণাবলি ধারণ করেন। ঋত্বিক ঘটক ও সুচিত্রা সেনের এই সম্পর্ক বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে আছে। একজন মহাকাব্যিক পরিচালকের দৃষ্টিকোণ থেকে, যিনি সুচিত্রাকে 'মহানায়িকা' নয়, বরং এক দেবী মায়ের মতো দেখেছিলেন, সেখানে তাঁর হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে ছিল এক অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সুচিত্রা সেনের প্রতি এই অনুভূতির কথা আজও দর্শকদের মনে গেঁথে আছে। এই গল্প শুধু এক পরিচালক এবং অভিনেত্রীর সম্পর্কের কাহিনী নয়, এটি মানবিকতা, সহানুভূতি ও ভালোবাসার গল্পও বটে, যা বাংলা সিনেমার ইতিহাসে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে।