মালদা মেডিক্যাল কলেজে গত সোমবার এক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১৮ বছর বয়সী এক তরুণী একসঙ্গে চার কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তবে শিশুরা অপুষ্টিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে, কারণ তাদের ওজন কম ছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনটি সদ্যজাত শিশুর ওজন ছিল মাত্র ১ কিলো ৫০০ গ্রাম এবং অন্যটির ওজন ছিল ১ কিলো। এর ফলে শিশুরা শারীরিক সমস্যার মুখে পড়েছে। এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে, কারণ তরুণীর বয়স মাত্র সাড়ে ১৬ বছর হওয়ার পরেই তার বিয়ে হয়েছিল, যা নিয়ে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রসঙ্গত, তরুণীর স্বামী, যিনি পেশায় দিনমজুর এবং দিল্লিতে কাজ করেন, জানিয়েছেন যে তার স্ত্রীর সাড়ে ১৬ বছর বয়সে সম্বন্ধ করে তার পরিবার বিয়ের ব্যবস্থা করে। স্ত্রীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তিনি গত মাসে গ্রামে ফিরে এসেছিলেন। তরুণীকে গত শুক্রবার মালদা মেডিক্যাল কলেজের মাতৃমা বিভাগে ভর্তি করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে এই চার কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। মালদা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে শিশুরা অপুষ্টিজনিত কারণে শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তবে চিকিৎসকরা তাদের সাধ্যমত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করছেন। মেডিক্যাল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডাঃ প্রসেনজিৎ কুমার বর বলেন, "ওই তরুণী সফলভাবে চার কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং চিকিৎসকরা তাঁদের সাধ্যমত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করছেন।"এদিকে, গাজোল ব্লকের বিডিও সুদীপ্ত বিশ্বাস বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রশাসন যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "বাল্যবিবাহের ঘটনা দুর্গম এলাকার কিছু অঞ্চলে ঘটছে, এবং সেসব এলাকায় ঠিক সময়ে এই ধরনের খবর পাওয়া যায় না। কিছু পরিবার গোপনে তাদের মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে থাকে, এবং এতে পাচারের চক্রও জড়িয়ে পড়ছে। আমাদের লক্ষ্য, বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা।"
অভাবের সংসারে আইএএস হওয়ার স্বপ্ন দেখে সপ্তদশী "বীরাঙ্গনা"
মালদা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুদীপ্ত ভাবুড়ি জানিয়েছেন, "বর্তমানে জেলায় বাল্যবিবাহের পরিসংখ্যান ৪৪ শতাংশ থেকে কমে ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এখনও বিয়ের পরে এসব ঘটনা জানার পর আমরা সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলির কাছে গিয়ে সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চা না নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।" তিনি আরও জানান, অল্প বয়সে বিয়ে এবং মা হওয়ার পর মৃত্যু হওয়া বেশ কিছু ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো সচেতনতা প্রচার চালানো হচ্ছে, বিশেষ করে রতুয়া, হরিশ্চন্দ্রপুর, গাজোলসহ বেশ কয়েকটি ব্লকে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে থাকে। এই ঘটনাটি বাল্যবিবাহের বিপদ এবং এর সামাজিক পরিণতি সম্পর্কে আরও আলোচনার প্রয়োজনীয়তা সামনে এনেছে। প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বাল্যবিবাহ রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো ঘটনা ঘটতে না পারে।