শিবপুরাণ অনুসারে, মহাদেব বা আদি শক্তি মহাশক্তির সর্বপ্রথম আধার। তিনি নিজেই সমস্ত সৃষ্টি ও সংহারকারী। শাক্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে মহাদেবের আরাধনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং তাঁকে আরাধনা করার শ্রেষ্ঠ দিন হল মহা শিবরাত্রি। এই দিনটি শাস্ত্র মতে উপোস, পুজো ও ব্রতের মাধ্যমে ভক্তি-ভরে পালন করলে ভগবান শিব ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। বিশ্বাস অনুসারে, মহাশিবরাত্রির দিন কুমারীরা যদি ব্রত পালন করেন, তবে তাঁরা শিবের মতো একটি শ্রেষ্ঠ জীবনসঙ্গী লাভ করেন। এই বছরের মহাশিবরাত্রি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি একই দিনে মহা কুম্ভের শেষ স্নান এবং মেলার অন্তিম দিনেও পরিণত হয়েছে।
শিবরাত্রির তিথি ও সময়সূচী
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে:
চতুর্দশী তিথি শুরু: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, সকাল ১১টা ১০ মিনিটে।
চতুর্দশী তিথি শেষ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুযায়ী:
চতুর্দশী তিথি শুরু: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, সকাল ৯টা ৪১ মিনিট ৮ সেকেন্ডে।
চতুর্দশী তিথি শেষ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, সকাল ৮টা ২৯ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে।
নিশীথ কাল: মহাশিবরাত্রির শ্রেষ্ঠ সময়
শাস্ত্র মতে, মহা শিবরাত্রির দিন পুজো করার শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত হলো নিশীথ কাল। এই বিশেষ সময়টি ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ১২টা ৯ মিনিট থেকে শুরু হয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ১২টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হবে। নিশীথ কালেই শিবের পূর্ণ আরাধনা করা উত্তম বলে শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে।
মহাশিবরাত্রি তিথিতে, শিবের পূজা ও আরাধনা চারটি প্রহরে বিভক্ত। কিছু ভক্ত একটি প্রহরে পুজো করেন, আবার কিছু ভক্ত চার প্রহরেই পূজা করে থাকেন। শাস্ত্র মতে, পূর্ণ ফল লাভের জন্য এবং ব্রত পালনের সঠিক নিয়ম মেনে চলার জন্য চার প্রহরে পূজা করা উচিত। সন্ধ্যাবেলায় শিবের পুজো শুরু করে, শিবের অরাধনায় সারা রাত জেগে থেকে পুণ্য লাভ করা যায়।
শিবরাত্রিতে মহাকুম্ভের শেষ শাহি স্নান!কটার সময় স্নান করবেন বিস্তারিত জেনে নিন
মহাশিবরাত্রি ব্রত পালনের সময় ভক্তদের কিছু বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করতে হয়:
১. পূর্ব প্রস্তুতি: ব্রত পালনের আগের দিন ভক্তদের সংযমী হতে হয়। এই দিন আমিষ খাবার পরিহার করা উচিত। ময়দার কিছু খাবার খাওয়া যেতে পারে, তবে লবণ শুধুমাত্র সন্দক লবণ দিয়েই রান্না করা উচিত।
২. পুজোর পূর্বে স্নান: ব্রত পালনের শুরুতে শুদ্ধি ও পবিত্রতার জন্য স্নান করা উচিত। সন্ধ্যাবেলা স্নান করার পর শিবের পুজো শুরু করা উত্তম।
৩. নিষ্ঠাভরে পুজো: মহাশিবরাত্রির ব্রত পালনে একাগ্র মন নিয়ে শিবের পুজো করতে হবে। শুধুমাত্র এইদিন নয়, তিথি শুরুর আগের দিন থেকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে থাকলে পুণ্য লাভ হবে এবং ভগবান শিব সন্তুষ্ট হবেন।
মহাশিবরাত্রি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি আধ্যাত্মিক অনুভূতি ও উপলব্ধির দিনও বটে। শিবের ব্রত পালন করে ভক্তরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে শান্তি, সুখ, সমৃদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করেন। শিবের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও ভক্তি এই বিশেষ দিনে তার অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ পেতে সাহায্য করে। এছাড়া, শিবরাত্রির এই বিশেষ দিনে মহাশক্তির পূজা করে ভক্তরা জীবনে নতুন শক্তি ও উদ্দীপনা অর্জন করেন। মহা শিবরাত্রির পুণ্য তিথিতে শাস্ত্র অনুযায়ী বিধি-বিধান মেনে পূজা, ব্রত ও উপবাস করলে ভক্তরা পূর্ণ লাভের অধিকারী হন। শিবের কৃপায় সকলের জীবন সুন্দর, শান্তিপূর্ণ এবং সফল হোক।