প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনদিনের সফরে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছেন, যেখানে তাঁকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। এ সফরটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, কারণ ভারত মহাসাগরে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে। বিমানবন্দরে মোদিকে স্বাগত জানান শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও পর্যটন মন্ত্রী বিজিথা হেরাথ, স্বাস্থ্য ও গণমাধ্যম মন্ত্রী নালিন্দা জয়তিসা, শ্রম মন্ত্রী অনিল জয়ন্ত, মৎস্য মন্ত্রী রামালিঙ্গম চন্দ্রশেখর, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী সরোজা সাবিত্রী পালরাজ, এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী কৃষ্ণাথা আবেসেনা। এরপর, কলম্বোতে ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কোয়ারে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েক প্রধানমন্ত্রী মোদিকে স্বাগত জানান।
উলেখ্য, প্রধানমন্ত্রী মোদি শ্রীলঙ্কায় পৌঁছানোর পর এক টুইটে বলেন, “কলম্বোতে পৌঁছেছি। বিমানবন্দরে আমাকে স্বাগত জানানোর জন্য মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। শ্রীলঙ্কায় কর্মসূচি শুরু করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।” মোদির এই সফরের মূল উদ্দেশ্য, দুই দেশ ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত করা এবং শ্রীলঙ্কায় ভারতের উন্নয়ন সহায়তার প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করা। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে শ্রীলঙ্কাকে অনুদান দেওয়া কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মোদি, যার মধ্যে অনুরাধাপুরায় বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া, শ্রীলঙ্কার ভবিষ্যতের জন্য অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি নিয়ে প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকের সঙ্গে আলোচনা করবেন মোদি। এটি একটি কৌশলগত সংলাপ, যেখানে দুই দেশের সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার বিষয়ে আলোচনা হবে। গত ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ভারত সফরে এসে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলেন, এবং তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ভারতবিরোধী শক্তি শ্রীলঙ্কার মাটি ব্যবহার করতে পারবে না। প্রসঙ্গত, গত ২৩ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতায় আসে বামপন্থী ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার জোট। নতুন শাসক দলের প্রধান, প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েক, চিনপন্থী হিসেবে পরিচিত। এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, কারণ পূর্বে অনুরা দলের প্রতিষ্ঠাতা রোহন উইজেবরা ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র বক্তব্য রেখেছিলেন। তবে, দিশানায়েক ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা ভারতের জন্য কিছুটা স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলার তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহি ও বক্রেশ্বর যথাক্রমে
এদিকে, ভারত মহাসাগরে চিনের বাড়তি প্রভাব ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ভারতের জলসীমায় নজরদারি চালাতে চিনের একাধিক জাহাজ সাগরে অবস্থান করছে, যা ভারতের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদির এই সফর চিনের শ্রীলঙ্কায় সাগরীয় প্রবেশের বিরুদ্ধে এক ধরনের কূটনৈতিক বার্তা হতে পারে। এ সফর শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে ভারতীয় কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিস্থাপন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। মোদি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো গভীর করতে এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চিনের ‘দাদাগিরি’ রুখতে এই সফরকে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন।