দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা থানার ঢোলাহাট এলাকার দক্ষিণ রায়পুরে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক বাজি বিস্ফোরণ, যার ফলে প্রাণ হারালেন বণিক পরিবারের আট সদস্য। ঘটনার পরই পুলিশের তৎপরতায় গ্রেফতার করা হয়েছে বণিক পরিবারের বড় ছেলে চন্দ্রকান্ত বণিককে। মঙ্গলবার তাকে আটক করা হলেও বুধবার কাকদ্বীপ আদালতে হাজির করার পর জামিন অযোগ্য ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে পাথরপ্রতিমার দক্ষিণ রায়পুরের তৃতীয় ঘেরির বণিক পরিবারের বাড়িতে বাজি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বাজি মজুত থাকায়, ওই বিস্ফোরণে বাড়িতে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চার শিশু-সহ পরিবারের আট সদস্যের। মৃত শিশুদের মধ্যে দু’জনের বয়স এক বছরেরও কম ছিল। এই ঘটনায় বাকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তারা হলেন চন্দ্রকান্তের স্ত্রী সান্ত্বনা বণিক (২৮), দুই সন্তান অর্ণব (৯) ও অস্মিতা (৮ মাস), তুষারের দুই সন্তান অনুষ্কা (৬) এবং অঙ্কিত (৬ মাস), এবং বণিক পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দ্রুত তদন্ত শুরু করে এবং চন্দ্রকান্ত বণিক ও তার ভাই তুষারের বিরুদ্ধে ছ’টি ধারায় মামলা রুজু করে। মামলা ধারা অনুযায়ী, ঘরে বিপজ্জনক বস্তু মজুত রাখার পাশাপাশি ‘অনিচ্ছাকৃত খুন’ এবং অন্যান্য ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ঢোলাহাট থানার পুলিশ চন্দ্রকান্তকে গ্রেফতার করে। বণিক পরিবারের বাজি তৈরির অনুমোদনপত্র (লাইসেন্স) রয়েছে বলে স্থানীয় বিধায়ক সমীর জানাও নিশ্চিত করেছেন। তবে গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, অনুমোদন থাকলেও সেখানে অবৈধ বাজি তৈরি হচ্ছিল। স্থানীয়দের মতে, বাসন্তীপুজোর আগে বাজি বিক্রির জন্য বাড়িতে বিপুল পরিমাণে বাজি মজুত করা হচ্ছিল। মঙ্গলবার সকালে, বাড়ির পাশে একটি ঘর থেকে বাজি তৈরির মশলা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। বাজির মশলা মাঠে পড়ে থাকতে দেখা গেছে, যা বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
পাথরপ্রতিমায় বাজি বিস্ফোরণে মৃত বেড়ে ৮
উলেখ্য, পুলিশ ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের পাঠিয়েছে, যারা নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার তদন্তের ফলে উঠে আসবে, কি কারণে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, বাজি প্যাকেট ভরার সময়ই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় গোটা গ্রাম স্তব্ধ। বণিক পরিবারের ১১ সদস্যের মধ্যে এখন ৩ জন বেঁচে আছেন, আর বাকি সবাই বিস্ফোরণের শিকার হয়েছেন। চন্দ্রকান্তের ছোট ভাই তুষারের স্ত্রী রূপা বণিকও আহত অবস্থায় কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, কিন্তু পরে তাঁরও মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গোটা পাথরপ্রতিমা এলাকায় শোকের ছায়া পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন, অবৈধ বাজি তৈরির কার্যক্রমের কারণে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ পুরো ঘটনার তদন্তে তৎপর, এবং শিগগিরই মৃত্যুর সঠিক কারণ ও ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচন হবে। পাথরপ্রতিমার এই ভয়াবহ বাজি বিস্ফোরণ এক নতুন দিক উন্মোচন করলো যেখানে অনুমোদিত কার্যক্রমের মধ্যে অবৈধতা এবং অবহেলার ফলে ঘটে যায় এক নৃশংস দুর্ঘটনা। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ এর যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী।