মিশরের বিখ্যাত গিজা পিরামিডের নিচে নতুনভাবে একটি বিশাল ভূগর্ভস্থ শহরের আবিষ্কারের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। গিজা পিরামিডের ভেতরে ২১০০ ফুট বিস্তৃত একটি ভূগর্ভস্থ শহরের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন স্কটল্যান্ডের স্ট্র্যাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিপ্পো বিওন্ডি এবং ইতালির পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরাডো মালাঙ্গা। এই অভিযানের শিরোনাম ছিল ‘খাফ্রে প্রকল্প’। তারা দাবি করেছেন যে, বিজ্ঞানীদের নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে পিরামিডের নিচে ৪,০০০ ফুট নিচে এবং তারও নিচে অসংখ্য কাঠামো এবং কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে, তারা উপগ্রহ ডেটা বিশ্লেষণ এবং সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (SAR) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ভূগর্ভস্থ কাঠামো আবিষ্কার করেছেন। এর মধ্যে আটটি উল্লম্ব সিলিন্ডার-আকৃতির কাঠামো এবং আরো কিছু অজ্ঞাত কাঠামো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশেষভাবে, বিজ্ঞানীরা পিরামিডের ভিতরে পাঁচটি ছোট ঘরের মতো কাঠামোও শনাক্ত করেছেন। তাদের মতে, একটি কাঠামোর ভিতরে একটি সারকোফ্যাগাস রয়েছে, যা আগে ফেরাউনের সমাধি হিসেবে চিহ্নিত ছিল। গবেষকরা বলছেন, তারা ‘হলস অফ এমেন্টি’ নামক কিংবদন্তি স্থান খুঁজে পেয়েছেন। এই স্থানটি গ্রেট স্ফিংক্স বা পিরামিড কমপ্লেক্সের নিচে অবস্থিত বলে বিশ্বাস করা হয় এবং এটি একধরনের গোপন চেম্বার, যেখানে প্রাচীন জনসংখ্যার তথ্য ধারণ করে রাখা হয়েছিল। তবে, মিশরের প্রাক্তন পুরাকীর্তি মন্ত্রী জাহি হাওয়াস এবং পিরামিডগুলোর অন্যতম প্রধান বিশেষজ্ঞ এই আবিষ্কারকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। হাওয়াসের মতে, বিজ্ঞানীরা যে কৌশলগুলো ব্যবহার করেছেন তা বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক নয় এবং তাদের দাবি ভিত্তিহীন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি বহু বছর ধরে মাধ্যাকর্ষণ, মিউন টমোগ্রাফি এবং ঐতিহ্যবাহী রাডারের মাধ্যমে গবেষণা করেছেন এবং তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, ভূগর্ভস্থ এই ধরনের বিশাল কাঠামোর অস্তিত্বের কোনো যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া, রাডার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর লরেন্স কনিয়রস এই আবিষ্কারকে একটি বাড়াবাড়ি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে, এসব সরঞ্জাম ভূগর্ভের হাজার হাজার ফুট নিচে কাঠামোর ছবি তৈরি করতে সক্ষম নয়। তিনি আরো বলেন, এই ধরনের কাঠামো সাধারণত প্রাচীন সভ্যতাগুলোর গুহা বা গুহার প্রবেশদ্বারের কাছে তৈরি হতে পারে, এবং এর উপর ভিত্তি করে গিজা পিরামিডের আগে ছোট ছোট কাঠামো তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কাশ্মীর উপত্যকায় রেলপথের নতুন যুগ: কাটরা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত বিশেষ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন
এমনকি বেশ কিছু বিশেষজ্ঞও বিশ্বাস করেন, এই আবিষ্কারগুলো আরো বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা উচিত এবং স্বাধীন পেশাদারদের একটি দলকে এই তথ্য যাচাই করার জন্য নিয়োগ দেওয়া দরকার। এই ধরনের বিতর্কিত আবিষ্কারের পর, বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য ফলাফলের জন্য আরো পরীক্ষণ ও গবেষণা প্রয়োজন। মিশরের গিজা পিরামিড, যা প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম বিস্ময়, সেই পিরামিডের নিচে নতুন শহর ও কাঠামো আবিষ্কারের দাবি বিজ্ঞানীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তবে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত বিভক্ত হওয়ায়, এই গবেষণার সত্যতা এখনও সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সঠিক বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে, ভবিষ্যতে এই আবিষ্কারটি ইতিহাসের নতুন দৃষ্টিকোণ উন্মোচন করতে পারে।