মুদ্রাস্ফীতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের সাধারণ মানুষ আজ দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে। প্রতি দিন তাদের মুখে হাসি ফেরানোর কোনও প্রতিকার এখনও সরকারের তরফে দৃশ্যমান হয়নি। তবে, একটি বিষয় গত কয়েকদিনে সবার নজর কেড়েছে— সেসব রাজনৈতিক নেতাদের বেতন ও ভাতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে মোদি সরকারের ‘অগ্রাধিকার’। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, সাংসদদের বেতন একলাফে ২৪ শতাংশ বাড়ানো হবে। এছাড়াও সাংসদদের দৈনিক ভাতা ও প্রাক্তন সাংসদদের পেনশনও বেড়েছে সমানুপাতিক হারে।
উলেখ্য, সোমবার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রক থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, সাংসদদের মাসিক বেতন এখন থেকে ১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা হবে, যা আগে ছিল ১ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে সাংসদদের দৈনিক ভাতা ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে দৈনিক ভাতা ছিল ২ হাজার টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। একই সঙ্গে প্রাক্তন সাংসদদের পেনশনের অঙ্কও বেড়েছে ২৪ শতাংশ। আগে যেখানে পেনশন ছিল ২৫ হাজার টাকা, তা এখন বেড়ে ৩১ হাজার টাকা হবে। এছাড়াও প্রতি বছর সাংসদ থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত পেনশন ২ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এই নতুন বেতনবিধি ১ এপ্রিল ২০২৩ থেকে কার্যকর হবে, অর্থাৎ সাংসদরা এই বর্ধিত বেতন ও ভাতার পুরোনো অর্থ এককালীন ‘এরিয়ার’ হিসেবে পাবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্র জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাতে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সাংসদদের আয় সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে এবং তাদের কোনও আর্থিক অসুবিধা না হয়।
লন্ডন সফরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
অদ্ভুতভাবে, এই বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো বিরোধী দলের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিবাদ শোনা যায়নি। রাজনৈতিক মহলে বলা হচ্ছে, এটি নতুন কিছু নয়। আগের সরকারের আমলেও নিয়মিতভাবে জনপ্রতিনিধিদের বেতন বৃদ্ধি করা হত। তবে, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এই বেতনবৃদ্ধি থেকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আসছে— যদি সরকার এরকম দ্রুতগতিতে সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলি সমাধান করতে উদ্যোগী হত, তাহলে হয়তো অনেকগুলো সমস্যার দ্রুত সমাধান হতে পারত। এমন সময় যখন সাধারণ মানুষ মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যবৃদ্ধি এবং জীবনের নানান সমস্যায় জর্জরিত, তখন এই ধরনের সিদ্ধান্ত রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্যই আলোচনার বিষয়। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জনগণের স্বার্থে এরকম উদ্যোগ হতে পারত। তবে, একে অপরের প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন করাও জরুরি। এই সিদ্ধান্তটি দেশের রাজনীতির নতুন বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলে, যেখানে সাংসদদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং তাদের দায়িত্বের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করাটা সরকারের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির বিপরীতে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা যখন বেড়েই চলেছে, তখন সাংসদদের বেতন ও ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন রাজনৈতিক বিশ্লেষণ যোগ করছে, তেমনই এটি সমাজের এক অংশের সমস্যাকে অন্য অংশের আর্থিক সমৃদ্ধির সাথে তুলনা করার ইঙ্গিতও দেয়। জনগণের সমস্যা সমাধান না হলেও, ‘অগ্রাধিকার’ দেওয়া হয়েছে সেই শ্রেণির জন্য যারা দেশের সঙ্কটকালীন সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বে থাকেন।