৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এবছর নেই বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে কলকাতা বইমেলায় অংশগ্রহণ করা বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প এবার প্রথমবারের মতো বাদ পড়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা আলোচনা, সমালোচনা এবং প্রতিবাদ উঠে এসেছে। বিশেষত, বাংলাদেশের সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন এই সিদ্ধান্তের প্রতি নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছেন।
কলকাতা বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান 'পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড' জানায়, বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন বাদ দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে। গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বইমেলার অন্যান্য স্টলগুলোর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।" তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে ওপার বাংলার মধ্যে, বিশেষ করে তসলিমা নাসরিনের মতো বিশিষ্ট লেখকরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ফেসবুকে একটি পোস্টে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, "এবারের কলকাতা বইমেলায় 'বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন' নেই। কিন্তু বাংলাদেশের বইমেলায় কখনো 'পশ্চিমবঙ্গ প্যাভিলিয়ন' থাকে না। এটা একদম নিষিদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশিত কোনো বইও বাংলাদেশের বইমেলায় স্থান পায় না।" তিনি আরও বলেন, "এটা এখন যেন একধরনের 'তুমিও যাবে না, আমিও যাব না' ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
ওয়াশিংটনের আকাশে যাত্রীবাহী বিমানের সঙ্গে ধাক্কা আমেরিকা সেনার কপ্টারের! মৃত ১৮
তসলিমা নাসরিন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এই দ্বৈততা নিয়ে তার উদ্বেগ ব্যক্ত করে বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশকে তার বইমেলায় গ্রহণ করেছে, জামাই আদরে রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশ একই উদারতা দেখায়নি। বাংলাদেশের এই মনোভাব একেবারে বেদনাদায়ক। কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের বাড়িতে বছরের পর বছর নেমন্তন্ন খেয়ে বেড়ায়, কিন্তু কখনো নিজের বাড়িতে কাউকে আমন্ত্রণ জানায় না।" তিনি এসব মন্তব্য করে একে এমন বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকার মতো এক পরিস্থিতি বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশকে বাদ দেওয়া নিয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, কলকাতার বইমেলায় নানা প্রতিবাদ এবং আলোচনার মধ্যে, ভারত-বিরোধী পালাবদল, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, মৌলবাদী শক্তির উত্থান এবং জঙ্গি তৎপরতার মতো বিষয়গুলো প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু হওয়া কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রতিবছর বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে আসছিল। ২৮ বছরের ঐতিহ্যে এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণে বিরতি এসেছে। গিল্ডের এই সিদ্ধান্তের পেছনে এরকম রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং সামাজিক পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও তসলিমা নাসরিন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার কড়া অবস্থান পরিষ্কার করেছেন, ভারতীয় মঞ্চে বাংলাদেশের সাহিত্যকে জায়গা দেওয়া এবং তা উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা এখন পর্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। তবুও, উদারতা, বন্ধুত্ব এবং রাজনৈতিক বাস্তবতার দিক থেকে এই দ্বৈততা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন রেখে গেছে। কলকাতা বইমেলা এখনো চালু, এবং এর উদ্বোধন হয়েছে গত মঙ্গলবার। তবে এবছর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন বাদ পড়ায়, এ নিয়ে চলমান আলোচনার মধ্যে অস্বস্তি এবং অবাক বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে।