ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার আমেরিকার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে তিনি কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন। ট্রাম্প ৫৩৮ ইলেকটোরাল সিটের মধ্যে ২৭৭ ইলেকটোরাল সিট পেয়েছেন৷ যা ২৭০ এর বেশি৷ অর্থাৎ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
সুইং স্টেটগুলিতেও জয়জয়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump)। আমেরিকার ৭ নিরপেক্ষ প্রদেশের ৭টিতেই জয় পেয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। গতবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই সাতটির মধ্যে ৬টি নিজেদের দখলে রেখেছিল ডেমোক্রেটিকরা।
মার্কিন রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বরাবরই নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করে এই ৭ নিরপেক্ষ প্রদেশ। যেগুলি হল, পেনসিলভেনিয়া, উইসকনসিন, মিশিগান, জর্জিয়া, নেভাদা, অ্যারিজোনা ও নর্থ করোলিনা। বলা হয়, এই ৭ প্রদেশ যার দিকে ঝোঁকে আমেরিকার মসনদ যায় তাঁর দখলে। নির্বাচনের (US Election Result 2024) প্রাথমিক প্রবণতা অনুযায়ী, এই ৭ প্রদেশই এবার রিপাবলিকান প্রার্থীকে দুহাত উজাড় করে আশীর্বাদ দিয়েছে। ৭টি সুইং স্টেটের ৭টিতে এবং ২৪টি প্রদেশে ট্রাম্প জয়ের পথে এগিয়ে যাওয়ায়, স্থির হয়ে যায় সাদা বাড়ির ভবিষ্যৎ। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে ট্রাম্প চলে গিয়েছেন ২৬৭-তে। অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস মাত্র ২২৪। রিপাবলিকানদের এই বিরাট সাফল্যের পিছনে ট্রাম্পের নীতিগুলিকেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সবচেয়ে বেশি বয়সে নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর বয়স এখন ৭৮ বছর। এর আগে জো বাইডেন ৭৭ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প ৬০ বছর বয়সী কমলা হ্যারিসকে হারিয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে তিনি আরেক নারী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র একটি মহাশক্তি, যার কাছে শক্তিশালী সেনাবাহিনী, পরমাণু অস্ত্র এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি রয়েছে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি দেশের এবং সরকারের প্রধান হন। এর সাথে সাথে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফও হন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির কাজ হচ্ছে কংগ্রেস দ্বারা প্রণীত আইন বাস্তবায়ন করা। এই কাজে তাকে সাহায্য করার জন্য একটি ক্যাবিনেট থাকে, যার সদস্যদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন।
রাষ্ট্রপতি ১৫টি এক্সিকিউটিভ ডিপার্টমেন্টের প্রধানদের নিয়োগ করেন, যারা দেশের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এর মধ্যে সিআইএ (CIA) থেকে শুরু করে পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (EPA) পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়াও, রাষ্ট্রপতি ৫০টিরও বেশি স্বাধীন ফেডারেল কমিশনের প্রধানদের নিয়োগ করেন, যেমন ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ড বা সিকিউরিটিজ এবং এক্সচেঞ্জ কমিশন। রাষ্ট্রপতি ফেডারেল বিচারক, রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য ফেডারেল অফিসারদের নিয়োগও করেন।
রাষ্ট্রপতির শপথ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে একটি কালো ব্যাগ দেওয়া হয়, যা “নিউক্লিয়ার ফুটবল” নামে পরিচিত। এই ব্যাগটি আগের রাষ্ট্রপতি থেকে নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই ব্যাগের মধ্যে থাকে আমেরিকার পরমাণু কেন্দ্রগুলোর স্থান এবং পরমাণু হামলা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য। রাষ্ট্রপতি যেখানে থাকুক না কেন, তার সঙ্গে এই ব্যাগটি থাকে এবং তিনি তা ব্যবহার করে যে কোনও মুহূর্তে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারেন।
ট্রাম্পের উত্থানের পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ অবশ্যই অভিবাসন নীতি। অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে শুরু থেকে সরব ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিযোগ ওঠে বাইডেনের শাসনে আমেরিকায় অনুপ্রবেশ আরও মাত্রাছাড়া আকার নিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারেও বার বার এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী। ‘সাদা বাড়ি’ দখলের লড়াইয়ে এই নীতিই ট্রাম্পকে এগিয়ে রেখেছিল হ্যারিসের তুলনায়। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উঠে আসছে বাইডেন শাসনে আমেরিকার দুর্বল অর্থনীতি এবং ট্রাম্পের ‘স্ট্রং ম্যান’ ভাবমূর্তি।
করোনা মহামারির পর থেকে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি চলছে আমেরিকায়। নির্বাচনী প্রচারে বার বার এই ইস্যুকে তুলে ধরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুর্বল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কমলা হ্যারিস জনগণকে আশ্বস্ত করলেও মন ভেজেনি জনগণের। ফলাফলের ট্রেন্ড বলছে, এই ইস্যুতে পরিবর্তন আনতে ট্রাম্পকে সুযোগ দিতে চান তাঁরা। এর পাশাপাশি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ হল, ট্রাম্পের ‘স্ট্রং ম্যান’ ভাবমূর্তি। মধ্যপ্রাচ্য ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বার বার বাইডেন সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন ট্রাম্প।
ইউক্রেন ও ইসরায়েলকে শত শতকোটি ডলারের অর্থসহায়তা ও অস্ত্র দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ আমেরিকার বেশিরভাগ মানুষ। অন্যদিকে, বাইডেন সরকারের এই নীতির সমালোচনা করে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন বিশ্বে বড় কোনো যুদ্ধ বাধেনি। ফলে মার্কিন অর্থনীতিকেও চাপের মুখে পড়তে হয়নি। বাইডেনের দুর্বল বিদেশনীতিও ট্রাম্পের ক্ষমতায়ণের অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
বুড়ো বয়সে ভেলকি দেখল দুনিয়া - আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক
ফল এখনো ঘোষণা হয়নি। তবে এরই মধ্যে বিশ্বনেতারা ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেছেন।
ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানানো বিশ্বনেতাদের মধ্যে আছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল
মাখোঁ, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার
স্টারমার, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রমুখ।