নাট্যমঞ্চের এক অনন্য নাম, যিনি মাত্র বাইশ বছর বয়সে থিয়েটারের মঞ্চকে বিদায় জানিয়েছিলেন, সেই নটী বিনোদিনী আজও বাংলা নাটকের ইতিহাসে অমর। স্টার থিয়েটারের সঙ্গে তাঁর নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকলেও, এক সময় এ নামটি তাঁর প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে পারেনি। তবে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন, যার মাধ্যমে নটী বিনোদিনীকে সম্মান জানানো হবে। সোমবার, সন্দেশখালি থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, কলকাতার ঐতিহাসিক স্টার থিয়েটারের নাম বদলে এখন থেকে এটি 'বিনোদিনী থিয়েটার' হিসেবে পরিচিত হবে। এই ঘোষণাটি নটী বিনোদিনীর প্রতি সম্মান জানানোর একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
উলেখ্য, মস্টার থিয়েটারের ইতিহাস এবং নটী বিনোদিনীর সঙ্গে এর সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক মতামত রয়েছে। অনেকেই বলেন, হাতিবাগানের স্টার থিয়েটার মূলত নটী বিনোদিনীর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, কারণ সেখানে তিনি অভিনয়ও করেননি। তাঁর নামে স্টার থিয়েটারের নির্মাণের প্রস্তাব প্রথমবার ওঠে বিডন স্ট্রিটে। তবে, ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, নটী বিনোদিনী নিজে গুর্মুখ রায় নামে এক বিত্তশালী ব্যক্তির মাধ্যমে এই থিয়েটারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। স্টার থিয়েটার প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৬৫ সালে, তবে তার সঠিক প্রতিষ্ঠার সময়টি বিতর্কিত। যাই হোক, ১৯২৮ সালে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ নির্মাণের ফলে বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটারটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আজও স্টার থিয়েটারের সঙ্গে নটী বিনোদিনীর নাম জড়িয়ে রয়েছে, বিশেষ করে থিয়েটারটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং তাঁর অবদানকে স্মরণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, বিনোদিনীর জীবনের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, ১৮৮৩ সালের ২১ জুলাই স্টার থিয়েটারের মঞ্চে যেখানে তিনি শ্রীচৈতন্যদেবের জীবন নিয়ে 'চৈতন্যলীলা' নাটক অভিনয় করেছিলেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। নাট্যজীবন শেষে, মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি থিয়েটারের মঞ্চ ছেড়ে দেন, ১৮৮৬ সালে, এবং ১৯৪১ সালে মৃত্যু বরণ করেন। ২০০৪ সালে স্টার থিয়েটারের পুনঃনির্মাণের সময় নাট্যপ্রযোজক গণেশ মুখোপাধ্যায়ের প্রস্তাব ছিল এই থিয়েটারের নাম 'বিনোদিনী' রাখার। তবে সেই সময় তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায়, স্টার থিয়েটারের ঐতিহ্য ও নটী বিনোদিনীর অবদানের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শিত হচ্ছে। স্টার থিয়েটার আজও কলকাতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অমূল্য রত্ন, এবং এই পরিবর্তন নটী বিনোদিনীর সংগ্রাম, শিল্পকর্ম এবং সাংস্কৃতিক অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।