সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, "কলকাতা মেট্রো স্টেশনে সম্মতি সহকারে দুজন সঙ্গীর মধ্যে চুমু খাওয়া" দৃশ্যটি নিয়ে নানান বিতর্ক হচ্ছে,নানাবিধ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।এই ঘটনা প্রসঙ্গে সমাজ-মনো বিশ্লেষক জয়দেব বেরা বলেছেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ বিশেষ করে কিছু শিক্ষিত ও শিল্পী মানুষ "মেট্রো স্টেশনে চুমু খাওয়ার" ঘটনাটি নিয়ে অনেক বাজে বাজে কথা বলছেন বা নেতিবাচক কথা বলছেন।উনাদেরকে বলি চুমু খাওয়া কোনও সামাজিক অপরাধ বা সমস্যা নয় কিংবা সংবিধান বিরোধী কার্যকলাপও নয়।তাই এটা নিয়ে এত বেশি আলোচনা-সমালোচনা না করাই শ্রেয়।কখনও খবর রেখেছেন, সমাজে কত মানুষ দারিদ্রের জন্য না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে,খবর রেখেছেন বেকারত্ব এর জন্য কত যুবক আত্মহত্যা করেছে,ধর্ষণ এর সঠিক বিচার না পেয়ে কত মা-বাবা অশ্রুভরা চোখে এখনও বসে আছেন এক বুক কষ্টে,খবর রাখেন অনাথ ও বৃদ্ধাশ্রমগুলোর,খবর রাখেন স্যানিটারি ন্যাপকিন এর অভাবে আজও কত নারীর মৃত্যু হচ্ছে,দিনে রাতে কত খুন হচ্ছে,সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হচ্ছে,বৃদ্ধ মা-বাবার উপর অত্যাচার হচ্ছে,নেশার জন্য কত সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে।চর্চা করতে হলে এইগুলো নিয়ে করুন,এগুলোর সমাধান এর জন্য বলুন,লিখুন এবং আন্দোলন করুন।তা না করে কেউ একজন "চুমু"খেলো সেটা নিয়ে আপনারা এত ব্যস্ত হচ্ছেন,মিডিয়াতে চিৎকার করছেন। শীতের সময় ত্বকের যত্ন
শুনুন,বর্তমান সমাজ অনেক এগিয়ে।নগরায়ন,আধুনিকীকরণ এবং বিশ্বায়নের জন্য আমরা সবাই এখন 'গ্লোবাল কালচার' বা বিশ্ব ওয়েস্টার্ন সংস্কৃতি অনুসরণ করতে বেশি পছন্দ করছি।তাইতো, বর্তমান সমাজে ছেলেরা ও মেয়েরা ওয়েস্টার্ন পোশাক পরে রাস্তা থেকে শুরু করে কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়েও যাচ্ছে,পালন করা হচ্ছে ভ্যালেন্টাইনস ডে,লিভ ইন থেকে শুরু করে রোমান্টিক বিবাহ এমনকি LGBTQ দের মধ্যেও বিবাহ হচ্ছে,ছেলে-মেয়েরা বাবার সাথে বসেও ড্রিংক করছে,মেয়েরাও রাস্তায় সিগারেট খেতে খেতে যাচ্ছে,তরুণ ছেলে-মেয়েরা যাচ্ছে নাইট ক্লাব,বার প্রভৃতি জায়গায়।আমরা এইগুলো মেনেও নিচ্ছি যুগের সঙ্গে সঙ্গে তালমিলিয়ে।সুতরাং,আমরা চাইলেও এই আধুনিক সংস্কৃতিগুলোকে আর দূরীকরণ করতে পারবো না বা দূরে সরিয়ে রাখতেও পারবো না।
এখন গ্রাম,শহর সবই এক হয়েগেছে।কারণ আমাদের সামাজিকীকরণই হচ্ছে এইভাবেই।তবে হ্যাঁ, সমাজের নৈতিকতার দিক থেকে ঘটনাটি কিন্তু ঠিক নয়।কারণ সব কিছুর একটা স্থান-কাল-পাত্র রয়েছে।কিন্তু যদি আধুনিক সংস্কৃতিক দিক থেকে সমাজকে দেখি তাহলে আমার মনে হয় না এই চুমু খাওয়াটা খুব বেশি বাড়াবাড়ি বা অপরাধমূলক কাজ।তারপর আবার ঘটনাটি ঘটেছে শহরে।যেখানে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকেই বেশি অনুসরণ ও প্রাধান্য দেওয়া হয়।তাই বিষয়টি একেবারেই সাধারণ একটি ঘটনা।যেটা নিয়ে এত চিৎকার করার কোনও প্রয়োজনই নেই।আর হ্যাঁ চুমু খাওয়ার জন্য কিন্তু ধর্ষণ বাড়ছে না।একজন অভিনেত্রী এই কথাটি বলেছিলেন।উনাকে সম্মান জানিয়ে বলে রাখি, ধর্ষণ হওয়ার আলাদা কিছু কারণ রয়েছে।যেটা অনেক বিষয়ের সাথে সংযুক্ত।ধর্ষণের কোনও একক কারণ নেই।ওপেন কিস করা এটা পাশ্চাত্য সংস্কৃতিরই ফলাফল।সব কিছুকে যেমন আমরা ধীরে ধীরে মেনে নিয়েছি এই বিষয়গুলোকেও মেনে নিতে হবে।এটাই আমাদের বর্তমান আধুনিক-সভ্য এবং প্রযুক্তিমূলক সমাজ।যা পুরোপুরি এখন পাশ্চাত্য সংস্কৃতি নির্ভর হয়ে পড়েছে।সমাজের এইরূপও আমাদেরকে ধীরে ধীরে মেনে নিতে হবে।তবে ট্রাডিশনাল সংস্কৃতিকেও ভুললে চলবে না,সেই দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে।যাইহোক, বিষয়টি খুব বেশি প্রতিবাদ এর বলে আমার মনে হয়না।