রাজ্য-সহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পরিষেবা বন্ধ, এদিকে নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাড়িতে যান মমতা
তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যে সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দায়ের হয়েছে জনস্বার্থ মামলা। মঙ্গলবারই তার শুনানির কথা। সিবিআই না হলেও অন্য কোনও নিরপেক্ষ তদন্তকারী সংস্থা যাতে দায়িত্ব নেয়, সেই আর্জিও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির ডাকে গোটা রাজ্যজুড়ে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নির্যাতিতার বাড়ি যাওয়া ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার কিনারা করার জন্য তৎপর পুলিশ প্রশাসন। সোমবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, ‘নক্কারজনক ঘটনা। ওখানে নার্সরা ছিল, ওদের সুরক্ষা কর্মীরা ছিল। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল তা ভেবে পাচ্ছি না!’ পাশাপাশি পুলিশকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি। রবিবারের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে না পারলে সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হবে, এমনটাও জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরজি করের ঘটনায় ইতিমধ্যেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে অভিযুক্তকে। শুরু হয়েছে তদন্ত। হাসপাতালের পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।সত্য দ্রুত সামনে আসবে বলে দাবি করেছে পুলিশ। সোমবারই নির্যাতিতার সঙ্গে শেষপর্যন্ত থাকা চার জুনিয়র ডাক্তারকে তাঁরা তলব করেছে লালবাজারে।
গত কয়েক দিনে একাধিক তত্ত্ব উঠে এসেছে এই পৈশাচিক ধর্ষণকাণ্ডকে ঘিরে। তবে মোটামুটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটা মিল পাওয়া গিয়েছে। ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ার্স শুধু একা নয়, এই নারকীয় পৈশাচিক কর্মে তার সহযোগী আরও অন্য কেউ আছে।
এদিকে ইস্তফা দিয়েছেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ।
আরজিকর (RG Kar) কাণ্ডে কার্যত বিক্ষোভরত ইন্টার্ন এবং চিকিৎসকদেরই জয় হল। এর আগেও বেশ কয়েকবার অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছে পড়ুয়ারা। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভ নতুন নয়। এমনকি বদলি হয়েও অতীতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ফিরে এসেছিলেন তিনি।
অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগের পরেও আন্দোলনের আঁচ কমেনি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সোমবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে ৬ দফা দাবির কথা বলেছেন আন্দোলনকারীরা। দাবিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতি জারি থাকবে বলেই হুঁশিয়ারি তাঁদের।
আন্দোলনকারীদের দাবিগুলি হল:
১. তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট-সহ যাবতীয় নথিপত্র আন্দোলনকারীদের হাতে দিতে হবে।
২. হাসপাতালের অধ্যক্ষ, এমএসভিপি, ডিন অফ স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার, রেসপিরেটরি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানকে পদ থেকে সরাতে হবে। তাঁদের লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। ভবিষ্যতে তাঁদের আর কোনও পদে রাখা যাবে না।
৩. রাজ্যের প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজ ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি নজরদারি, নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন, পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের জন্য বিশ্রাম নেওয়ার ঘরের বন্দোবস্ত করতে হবে।
৪. আন্দোলনকারীদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় পুলিশকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
৫. সমাজমাধ্যমে মানহানির জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. তরুণী চিকিৎসকের পরিবারকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আর্থিক সাহায্য দিতে হবে।
এই ৬ দফা দাবিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেই হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। রাজ্য-সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বন্ধ পরিষেবা। তার ফলে চরম ভোগান্তির শিকার রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। এই কর্মবিরতি নিয়ে সোমবার বিকেলে নবান্নে বৈঠকে বসবেন মুখ্যসচিব।