প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তার পরেই সোমবার বেলায় বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিক সম্মেলনে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার কথা ঘোষণা করেন। সেনাপ্রধানের এই ঘোষণার পরে সোমবার রাতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। তারা জানিয়ে দেয়, সেনা-সমর্থিত বা রাষ্ট্রপতিশাসিত কোনও সরকারকে সমর্থন করা হবে না। প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া অন্য কোনও সরকারকে সমর্থন করা হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হোক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এমনটাই দাবি জানালেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে এই কথা জানিয়ে দেন তাঁরা। সেই সঙ্গে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে সেনাশাসন কোনওমতেই মেনে নেবেন না। ‘দেশ গড়তে’ ইউনুসকেই চান পড়ুয়ারা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ দেশের মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলে। দেশের ভিতরে আওয়ামী লীগ একা হয়ে পড়েছিল। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতিতে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল সাধারণ মানুষের। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে অন্য সব দল কট্টর সরকার-বিরোধী অবস্থান নেয়। ফলে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দিক থেকে একা হয়ে পড়েন। আর শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন, সাংবাদিক বৈঠকে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি ‘রাজাকার’ শব্দও ব্যবহার করেছিলেন। এরপরই আন্দোলন আরও জোরাল হয়। আর সেই আন্দোলন দমনে শক্তিপ্রয়োগই করেছিলেন তিনি।
অন্য দিকে, ভূ-রাজনীতিতে হাসিনা সরকার ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পর পর তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করেও টিকে রয়েছে—এমন আলোচনা চলছিল অনেক দিন ধরেই। সরকার চিনের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক রেখে চলছিল। গত ৭ জুলাই থেকে চিন সফরও করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই সফরের ফল ভাল হয়নি। আমেরিকার সঙ্গেও টানাপড়েন অনেক দিনের। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ওই টানাপড়েন আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনা এবং তাঁর নেতারা আমেরিকার কড়া সমালোচনাও করেন।
অশান্ত বাংলাদেশে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে সেলিম খান ও তাঁর পুত্র তথা সে দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা শান্ত খানের।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা জানিয়েছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। সব মৃত্যুর বিচার হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সোমবার যখন বাংলাদেশ জুড়ে আন্দোলনকারীদের উল্লাস চলছে, তখন পাঁচতারা হোটেলে লাগিয়ে দেওয়া হল আগুন। ঝলসে মৃত্যু হল অন্তত ১৮ জনের।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন মধ্য রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেন, “তিন বাহিনীর প্রধান, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সমাজের প্রতিনিধি ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে জরুরিভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।”