#Pravati Sangbad digital Desk:
যুদ্ধ জিততে হলে শুধু অস্ত্র দরকার হয় না, স্নেহ-মমতা-ভালবাসা এবং অসীম মনোবল আর সাহসেরও প্রয়োজন হয়। যুদ্ধ তো শুধু রণাঙ্গনে হয় না, যুদ্ধ জীবনেরও। সেই জীবনযুদ্ধে গর্বের সঙ্গে জিততে হলে আত্মবিশ্বাস আর সাহসই হল আসল হাতিয়ার। ৬ বছরের এক শিশু তা প্রমাণ করে দিয়েছে।
কতটা মনের জোর আর জীবনের প্রতি ভালবাসা থাকলে কমবয়সেই এতটা বোধশক্তি আর পরিণত মনের হওয়া যায়, তা এই শিশু বুঝিয়ে দিয়েছে।
হায়দরাবাদের অ্যাপোলো হাসপাতালের একটি খবর সামনে এসেছে। একজন ডাক্তারবাবুর টুইট থেকে খবরটি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। সিনেমায় বা গল্পকথায়, উপন্যাসে আবেগ ও কল্পনার রঙে গল্প সাজান লেখকেরা, কিন্তু এ কাহিনী একেবারে বাস্তব। ক্যানসারে (cancer) ভুগছে ৬ বছরের মানু। ব্রেন ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্যানসার যাকে চিকিত্সার পরিভাষায় বলে গ্লিওব্লাস্টোমা মাল্টিফর্ম (glioblastoma multiforme)। খুবই বিরল অসুখ যাতে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র অকেজো হতে শুরু করে। ফলে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ে রোগী। মানুর শরীরকেও গ্রাস করেছে পঙ্গুত্ব। ৬ বছরেই তার সঙ্গী হয়েছে হুইলচেয়ার।
"আমার গ্রেড ফোর ক্যানসার হয়েছে। আর মাত্র ছয় মাস বাঁচব। আবার বাবা-মাকে একথা জানিও না, প্লিজ!"হুইল চেয়ারে বসা, শীর্ণকায় মনুর অনুরোধ শুনে খানিকক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়ে ছিলেন হায়দরাবাদের চিকিৎসক সুধীর কুমার। ছয় বছরের ছোট্টো ছেলেটি কী বলবেন তিনি! তবুও মনুকে আশ্বাশ দিয়েছিলেন, তিনি কথা রাখবেন ! সোশ্যাল মিডিয়ায় হায়দরাবাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভিজ্ঞতার কথা পড়ে চোখে জল নেটিজেনদের। পরপর নয় খানা টুইটে ছোট্টো মনুর মর্মস্পর্শী কাহিনী শুনিয়েছেন চিকিৎসক সুধীর কুমার। মনুর পরিবারের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়েছিল চেম্বারেই। ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত মনুর খিচুঁনির সমস্যার বিষয়ে পরামর্শ নিতে ছেলেকে নিয়ে এই নিউরোলজিস্টের কাছে এসেছিলেন বিধ্বস্ত এক তরুণ দম্পতি। আলোচনা পর বাবা-মা জানিয়েছিলেন, একা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চায় মনু!
হায়দরাবাদের হাসপাতালের OPD মনুর সঙ্গে প্রথম দেখা চিকিৎসক সুধীর কুমারের। তার সঙ্গে একা দেখা করতে চেয়েছিল শিশুটি। ঘরে মনু আসার আগে, চিকিৎসকের কাছে বাবা-মায়ের একটাই অনুরোধ ছিল, "কী হয়েছে সে বিষয়ে মনুকে কিছু বলবেন না।" তরুণ ওই দম্পতিকে আশ্বস্ত করেছিলেন চিকিৎসক সুধীর কুমার। হুইল চেয়ারে করে তাঁর চেম্বারে ঢুকেছিল ছয় বছরের ছেলেটি। এরপর কয়েক মিনিট সম্ভবত কোনও দিনই ভুলবেন না ওই চিকিৎসক। ছোট্ট শিশুর থেকে এমন কথা শুনবেন কোনও দিন কী আদৌ ভেবে ছিলেন তিনি! টুইটারে চিকিৎসক বলেন মনু এসে তাঁকে বলে, "আমার গ্রেড ফোর ক্যানসার হয়েছে। আর ছয় মাস বাঁচব। আমার বাবা মাকে এই কথা বোলো না।" মনুর মুখে এমন কথা শুনে কয়েক মুহূর্ত কথা বলতে পারেননি। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে চিকিৎসক মনুকেও আশ্বাস দিয়েছিলেন। আই প্যাডে নিজের অসুখ নিয়ে সে সব পড়ে ফেলেছে- একথাও চিকিৎসককে বলেছিল মনু।
মনুকে আশ্বাস দিলেও তাঁর কথা রাখতে পারেননি চিকিৎসক সুধীর কুমার। মনু বাইরে যাওয়ার পরেই ডেকে পাঠিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মাকে। পরামর্শ দিয়েছিলেন বাকি দিনগুলি ছেলেকে নিয়ে আনন্দে কাটাতে। কেঁদে ফেলেছিলেন মনুর বাবা-মা। সময়ের সঙ্গে মনুর স্মৃতি আবছা হয়ে গিয়েছিল চিকিৎসক সুধীর কুমারের ব্যস্ত জীবনে। নয় মাস পরে তাঁর চেম্বারে আসা দম্পতিকে মনে ফিরে এসেছিল ক্যানসার আক্রান্ত ছোট্ট মনুর কথা। নয় মাস পর চিকিৎসককে ধন্যবাদ জানাতে এসেছিলেন সন্তানহারা দম্পতি। বলেছিলেন, "আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আটটা মাস আমাদের জীবনের সেরা সময় ছিল।"
কাজ থেকে ছুটি নিয়ে শেষের মাসগুলি মনুর সঙ্গেই কাটিয়ে ছিলেন তার মা-বাবা। মনুর ইচ্ছা ছিল ডিজনিল্যান্ড দেখার। অসুস্থ ছেলের সেই আশাও পূর্ণ করেছিলেন তাঁরা। ওই আটটা মাস প্রাণভরে ছেলের সঙ্গে কাটিয়েছেন। ছেলেকে হারানোর মাস খানেক পর তাই তাঁরা ধন্যবাদ জানাতে এসেছেন চিকিৎসককে।
মর্মস্পর্শী এই কাহিনী পড়ে চোখের জল বাধ ভাঙেনি নেটিজেনদের।