#Pravati sangbad Digital Desk:
অভিনেতা জিতু কামাল ও নবনীতা দাসের গাড়ির সঙ্গে অন্য গাড়ির সংঘর্ষের ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করল নিমতা থানার পুলিশ। এই ঘটনায় এই নিয়ে মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হল। যাবতীয় ঘটনার সূত্রপাত তাঁদের গাড়ি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে। নিমতা থানার কাছাকাছি এলাকায় জিতু-নবনীতার গাড়িতে একটি পণ্যবাহী গাড়ি এসে ধাক্কা মারে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে। নিমতা থানায় অভিযোগ করতে যায় দু'পক্ষই। ক্ষুব্ধ অভিনেতা-অভিনেত্রী পরে ফেসবুক লাইভে ক্ষোভ উগরে দেন। সেখানেই নবনীতা ও জিতুর অভিযোগ, থানার সামনেই গাড়িতে ধাক্কা দেওয়া ব্যক্তিরা লাগাতার খুন, ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশ সেখানে উপস্থিত থাকলেও নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
লাইভে এসে ভীত, সন্ত্রস্ত অভিনেত্রী নবনীতা হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ সেখানে থাকা অবস্থায় কেন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রায় দু-আড়াই ঘণ্টা ধরে থানাতেই আটকে থাকেন তাঁরা। পরে এফআইআর নেওয়া হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানায় নিমতা থানার পুলিশ। অভিযুক্ত পণ্যবাহী গাড়িটির চালক, খালাসি গাড়ির মালিক ও তাঁদের সহকর্মী যুক্ত ছিলেন। শুক্রবার চারজনকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মহিলাকে নোংরা ভাষায় গালাগালি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে।জিতু কামালের গাড়ির চালক ও গাড়ির আরোহীদের বিরুদ্ধে অভব্য আচরণ এবং গাড়ি ভাঙচুরের জন্য পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, দুটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে শীঘ্রই তদন্ত শুরু হবে। অভিনেতার গাড়ির মালিক কে তা জানতে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে তথ্য চাওয়া হবে। ইতিমধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার দুপুরে। গাড়ি নিয়ে ফিরছিলেন জিতু-নবনীতা। সেই সময়েই নিমতা মাঝেরহাটি মোড়ে তাঁদের গাড়িকে অপর এক পণ্যবাহী গাড়ি ধাক্কা দেয় বলে অভিযোগ। তাঁদের গাড়িটির চালক ওই গাড়িটিকে আটকানোর চেষ্টা করলে বাধে বচসা। নবনীতা ও জিতুর অভিযোগ, তাঁদের গাড়ির চালককে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তাঁদের আরও অভিযোগ, এরপর নিমতা থানায় গেলে পুলিশি অসহযোগিতার মুখে পড়েন তাঁরা। বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের থানায় বসিয়ে রাখা হয় বলেও সংবাদমাধ্যমের কাছে ক্ষোভ উগরে দেন দম্পতি। তাঁর দাবি, থানায় পুলিশের সামনেই নাকি অভিযুক্ত যুবক তাঁকে ধর্ষনের হুমকি দিয়েছেন। টিভি অভিনেত্রীর কথায়, "...রেপ করে দেব, ডেড করে দেব বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাও থানার সামনে দাঁড়িয়ে। তাহলে বাইরে কী হবে?" তাঁর সংযোজন, "আমাদের দোষ এটাই যে আমরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়েছি। খুব বড় অন্যায় এটা! তাই আমাদের এভাবে থ্রেট করা হচ্ছে।" পাশাপাশি ওই পণ্যবাহী গাড়ি চালক তার দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে ক্রমাগত খুন ও ধর্ষণের হুমকি দিতে শুরু করে। ফেসবুক লাইভে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে নবনীতা বলেন, “আমি ভয় পেয়ে গিয়েছি। পুলিশের সামনে আমাকে বলা হচ্ছে রেপ করে দেব, ডেথ করে দেব। এটা কীরকম? পুলিশের সামনেই যদি এরকম করে বলা হয়, তাহলে আমি একা থাকলে কী করতে পারে। আমরা কী দোষ করেছি? গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার কী আমাদের অপরাধ? আমার প্রচণ্ড ভয় লাগছে।”
শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠককে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুবীর রায় বলেন, ‘‘নবনীতা দেবীর অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পরই তদন্ত শুরু করে দেওয়া হয়েছে। নিমতা থানার ওসি যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে বিষয়টি সামলেছেন। নিমতা থানার কর্তব্যরত যে এএসআই পরশুরাম বরদলুইয়ের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনেন নবনীতা, খুব শীঘ্রই তাঁর বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হবে।’’
ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছিলেন সেলিব্রিটি দম্পতি। তারা অভিযোগ করেছিলেন, নিমতা থানার পুলিশ শুধু সহযোগিতা করেনি তা-ই নয়, তাঁদের গাড়ি পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হয়।কয়েক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরে এফআইআর দায়ের করা হয় বলে দাবি করেন জিতু ও তাঁর স্ত্রী। দীর্ঘক্ষণ তাই থানাতেই বসে তাঁরা। সেখান থেকেই লাইভে এসে অভিনেত্রী জানান, তাঁর শরীর খারাপ লাগছে কিন্তু তিনি থানা থেকে বেরতে ভয় পাচ্ছেন।তবে, এফআইআর দায়ের করতে গড়িমসি করা হয় বলে প্রথম থেকে অভিযোগ করেন এই দম্পতি। তারই প্রেক্ষিতে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করল ব্যারাকপুর কমিশনারেট।